কাগজের ঠাকুর বিসর্জন দিতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু দুই শিশুর, শোকস্তব্ধ কুমারগঞ্জের ধাদলপাড়া
বালুরঘাট, ১২ মে —— ভাসানের আনন্দ বদলে গেল বিষাদে। পাড়ার শিশুদের হাতে তৈরি কাগজের কালী ঠাকুর বিসর্জন দিতে গিয়ে প্রাণ গেল দুই শিশুর। সোমবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের ধাদলপাড়া এলাকায় ঘটল মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। নদীর স্রোতে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মন্টি সরকার (১০) এবং চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ইশা সরকার (৯)-এর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে ধাদলপাড়া এলাকায় শিশুদের খেলা যেন রূপ নিয়েছিল ছোটদের এক নিজস্ব পুজোয়। বাড়ির উঠোনে রঙিন কাগজে তৈরি কালী ঠাকুর, ছোট্ট পূজার আসন, আর চারজন শিশুর নিষ্পাপ হাসি—ইশা, মন্টি, বিশাল ও তৃষা। পুজো শেষে ঠাকুর বিসর্জনের সিদ্ধান্ত, নদীর ধারে যাওয়ার আনন্দে উত্তেজিত চার বন্ধু। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তেই ভয়াবহতায় রূপ নেয়।
বিসর্জনের সময় নদীতে পা বাড়াতেই আত্রেয়ীর স্রোতে তলিয়ে যায় চারজন শিশুই। যাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা দৌড়ে এসে বিশাল ও তৃষাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ইশা ও মন্টিকে পাননি। পরে খবর পেয়ে আসে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ ও ডুবুরি দল। দীর্ঘ দু’ঘণ্টা চেষ্টার পর উদ্ধার হয় দুই শিশুর নিথর দেহ।
মৃত এক শিশুর দাদু রতন সরকার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘প্রতিদিনই ওরা ওই নদীর পাড়ে খেলতে যায়। আজ যে আর ফিরে এল না, ভাবিনি!’’ ইশার প্রতিবেশী অঞ্জনা সরকার ও মানসী দাসরা বলেন, ‘‘খেলার পুজো যে এমন মৃত্যু আনবে, তা কল্পনাতেও ছিল না।’’
কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্তও।
ধাদলপাড়া আজ নিঃশব্দ। আত্রেয়ীর স্রোতে ভেসে গিয়েছে কেবল দুটি ছোট প্রাণ নয়, ভেসে গিয়েছে একটা গোটা পাড়ার হাসি।