বালুরঘাট পুরসভার ভবন সংস্কারের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম। ভুল শুধরে নেবার নিদান জেলাশাসকের। অস্বস্তিতে পুর কতৃপক্ষ।
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৭ জুলাই ———-– ফের জটিলতা বালুরঘাট ভবন সংস্কারে! টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। পুরসভাকে ভুল শুধরে নেবার নিদান দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা শাসকের। যা নিয়েই কার্যত ঘরে বাইরে চাপে বালুরঘাট পুরসভা কতৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার পুরসভা নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণার এমন মন্তব্যকে ঘিরে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে বালুরঘাট পুরসভা কতৃপক্ষ। জানা যায়, সংস্কারের অভাবে ধুকতে থাকা বালুরঘাট ভবন খোল নলচে বদলে দিতে প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। যে কাজের বরাত ঠিকাদার সংস্থাকে দেওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা জানিয়েছেন, যোগ্য ঠিকাদার সংস্থাগুলি কে বাতিল করে, তুলনায় কম যোগ্য ঠিকাদার সংস্থাকে ওই কাজ পাইয়ে দেবার অন্যায় চেষ্টা করা হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ তুলেছিল ঠিকাদার সংস্থাগুলি। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটা তদন্ত কমিটি করে তদন্ত শুরু করা হয়েছিল। যে রিপোর্টেই কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। আর সে কারণেই পুর কতৃপক্ষকে সেই ভুলগুলি শুধরে নেবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষরা কোন প্রয়োজনে বিশেষত চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতায় গেলে তাদের থাকবার জন্যে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে রয়েছে জেলা পরিষদ ভবন। আবার বালুরঘাট পুরসভার পক্ষ থেকে সল্টলেকে ও রাজারহাটে দুটি ভবন তৈরি করা রয়েছে। রাজারহাটের দ্বিতীয় বালুরঘাট ভবনটি এখনো চালু না হলেও, সল্টলেকের বালুরঘাট ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে বালুরঘাট শহরবাসীর চাহিদা পূরণ করে আসছে। তারা কোলকাতায় গেলে ওই ঘরগুলিতেই আশ্রয় নিয়ে থাকে। কলকাতায় অবস্থিত বালুরঘাট ভবনে ঘরের সংখ্যা ২৩টি, যার মধ্যে ২টি ঘর সংরক্ষিত। কিন্তু বাম আমলে তৈরি হওয়া এই ভবনটির বর্তমান বেহাল অবস্থা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরিষেবা প্রায় তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছিল এই আবাসনে। দরজা, জানালা, বাথরুম জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরাসরি অভিযোগ ছিল বাসিন্দাদের। এর মধ্যে ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া তৃণমূল বোর্ড দীর্ঘ বছর পরে ঘর ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এতে আরো ক্ষোভ বাড়ে জন মানসে। যে কারনে বালুরঘাট ভবন একেবারে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয় বালুরঘাট পুরকর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে ওই ভবনের সমস্ত প্লাস্টার চটিয়ে নতুন ভাবে প্লাস্টার করানো, রং করানো, দরজা, জানলা বদলে ফেলা, পর্দা সহ সেখানে একটি ক্যান্টিন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে পুর সভার। এছাড়াও যে ২৩ টি ঘর রয়েছে সবগুলিতেই এসি যুক্ত করা হচ্ছে। এই ভবনের হাল বদলে গেলে বালুরঘাটের মানুষের কলকাতায় থাকা কিছুটা সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করেন পুর প্রধান অশোক মিত্র। পুরসভা এই কাজের জন্য প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে যার টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল কতৃপক্ষ। পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজ পেতে প্রায় সাতটি ঠিকাদার সংস্থা টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু চারজনকে টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে তাদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনটি ঠিকাদার সংস্থার মধ্যে একজনের ওই বরাত মেলে।আর এই বাতিল হওয়া ঠিকাদার সংস্থাগুলি আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা শাসক, চেয়ারম্যান সহ নানা জায়গায় অভিযোগ জানান।
জেলাশাসক বিজিণ কৃষ্ণা বলেন আমাদের কাছে ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি অভিযোগ এসেছিল। আমরা তা খতিয়ে দেখেছি। তাতে কিছু ভুল ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো শুধরে নেওয়ার পরামর্শ পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে।
পুরপ্রধান অশোক মিত্র বলেন, সমস্ত নিয়ম মেনে বালুরঘাট ভবন সংস্কারের কাজ করা হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো চলছে। জেলাশাসকের তরফে একটি চিঠি পেয়েছি, তবে এখনো তা দেখা হয়নি।