গঙ্গারামপুরের সিংফড়কা কাটাবাড়ি এলাকায় অবসরের দশ বছর পরেও এক প্রতিবন্ধী শিক্ষক নেশার টানে শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের।

0
1920

                             শীতল চক্রবর্তী গঙ্গারামপুর, ১১ জানুয়ারি দক্ষিণ দিনাজপুর:-স্কুলের শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় ১০ বছর আগে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষাদানের নেশা এখনো পর্যন্ত তিনি ছাড়তে পারেননি। তাই নেশার টানেই নিজের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঘরের মধ্যেই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করতে সহযোগিতা করে আসছেন প্রায় বিনা পয়সাতেই। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের সুকদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিংফড়কা কাটাবাড়ি এলাকায় গেলেই আদিবাসী ঘরের ৭০ বছরের দুকাঁধে ভর দিয়ে কোনোমতে চলা ফেরা করা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে দেখতে পাওয়া যাবে। শিক্ষকের কাছে পাঠদান করা ছাত্ররা জানালেন,এই শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করে আমি ভবিষ্যতে ভালো জায়গায় পৌঁছাতে চাই। এলাকাবাসীরা জানান, সত্যিই আমরাও ঐ শিক্ষকের এমন কাজে অবাক হয়ে যাই তার প্রতিভা দেখে। শিক্ষক জানালেন, আমার কাছে পড়াশোনা করে অনেকেই তাদের কর্মজীবনে ভালো জায়গায় পৌঁছেছেন। আগামী দিনেও চেষ্টা করব এমন প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য।            

 গঙ্গারামপুর থানার   সিংফড়কা এলাকার আদিবাসী ঘরের মানুষটি সাগরাম মূর্মুর ছোটবেলায় পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দু পা নষ্ট হয়ে যায়। তখন থেকেই পড়াশুনায় ভালো ছিল আদিবাসী পরিবারের এই মানুষটি। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি সরকারি চাকরি পেয়ে তা ছেড়ে দেবার পর অবশেষে তিনি তার বাড়ির এলাকায়  সিংফড়কা এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১১ সালে তিনি শিক্ষাজীবনের পেশা থেকে অবসর নেন। বর্তমানে তার পরিবারের ছেলে, মেয়ে স্ত্রী নিয়ে তাদের সংসার। সাগরাম বাবু    অবসর নেবার পর সিংফড়কা এলাকায় একটি দোকান তৈরি করে ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু কথায় আছে নেশা কি আর যায় তার পেশাতে। তাই শিক্ষক জীবনের অবসর সময় পার করার জন্য কোনমতে দু কাঁধে ভর দিয়ে লাঠি নিয়ে সিংফড়কা এলাকার পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ছাত্র-ছাত্রী জোগাড় করতে শুরু করেন। সেখানেই তিনি প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া শিখিয়ে আসছেন। প্রায় প্রতিদিন ৭/৮ জন ছাত্র ছাত্রীদের বিনা পয়সায় তিনি পাঠদান করেন।                    

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাগরাম মুর্মু জানালেন, পোলিও আক্রান্ত হয়ে দুটি পা নষ্ট হয়ে গেছে।সিংফড়কা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে অবসর নিয়েছি। নিজের দোকান থাকায় ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ব্যবসা ভালো না চলার জন্য বহুদিন ধরেই নেশার টানে সময় কাটানোর পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে দিচ্ছি। আমার কাছ থেকে পড়াশোনা করে অনেকেই শিক্ষক, পুলিশ, থেকে বহু সরকারি চাকরিতে সুযোগ পেয়েছেন। আমি এমন কাজ আগামী দিনেও করে যাব এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য।           

   অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছ থেকে পড়াশুনা করা জয়দীপ হাঁসদা ও আরেক ছাত্র জানালেন, শিক্ষকের কাছে অনেকদিন ধরেই আমরা পড়াশোনা করে আসছি। উনার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে আমরা মানুষের মত মানুষ তৈরি হব বলে আশা রাখছি।    

      এলাকার দুই স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত রায়, নির্মল চন্দ্র রায় রায়েরা জানালেন, উনি যেভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কাজ করে চলেছেন তার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।                         

    ইচ্ছে থাকলেই যে সমাজে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় তা আরো একবার প্রমান করে দিলেন প্রতিবন্ধী এই অবসরপ্রাপ্ত ৭০ বছরের মানুষটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here