সকালের ধানখেতে ‘পান্তা-পেয়াজের পরামর্শ সভা’! এস আই আর আতঙ্ক কাটাতে কৃষকদের পাশে দক্ষিণ দিনাজপুর তৃণমূল কৃষক সংগঠনের অভিনব উদ্যোগ
বালুরঘাট, ২২ নভেম্বর —– পান্তা-পেঁয়াজ নিয়ে কৃষকদের সাথে মাঠে বসে সরাসরি এস আই আর সমস্যার কথা শুনলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কিষাণ খেত মজদুরের সভাপতি। হাত লাগালেন কৃষকদের সাথে মাঠে ধান কাটার কাজেও। শনিবার সাতসকালে বালুরঘাট ব্লকের নাজিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর খাঁপুরে এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো মানুষের ঢল উপচে পড়ে। হাতের কাছে কৃষক নেতাকে পেয়ে এস আই আর ভীতি দূর করতে অনেকেই এদিন সাহেনশা মোল্লার সুপরামর্শ নিয়েছেন।
২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা না-থাকা, ফর্ম পূরণের জটিলতা, কোথায় যাবেন বা কীভাবে সমাধান পাবেন—এসব প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন স্থানীয় চাষিরা। তার উপর সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছিল। ফসল কাটার মরশুমে এস আই আরের চাপ কীভাবে সামলাবেন—সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছিল কৃষকদের মনের মধ্যে। এস আই আর নিয়ে বহুদিনের আতঙ্কে জর্জরিত গ্রামের চাষিদের মুখে এদিন আবার ফিরল স্বস্তির হাসি। কারণ, এই উদ্যোগটি ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম। গ্রামাঞ্চলের সেই সমস্ত মানুষদের বোঝাতে ও তাদের পাশে দাড়াতে উদ্যোগী হয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কিষাণ খেত মজদুর। সংগঠনের জেলা সভাপতি সাহেনশা মোল্লার নেতৃত্বে এদিন একটি প্রতিনিধি দল হাজির হয় নাজিরপুরের উত্তর খাঁপুর গ্রামে। যে প্রতিনিধি দলে হাজির ছিলেন বালুরঘাট ও বংশীহারি ব্লকের সভাপতিরাও। এদিন সকালে তারা এলাকায় পৌঁছে কৃষকদের সাথে কথা বলতে প্রথমেই ধান কাটার কাজে হাত লাগান। এরপরে তাদের সাথে এস আই আর নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে ও তাদের মনে আতঙ্ক দূর করতে কৃষকদের সাথে পান্তা-পেয়াজের আড্ডায় মেতে ওঠেন জেলা সভাপতি। সাত সকালে একঝাঁক কৃষক নেতৃত্বদের সাথে এস আই আর নিয়ে পান্তা-পেয়াজের এমন আলোচনা বসতে পেরে হাসি ফোটে কৃষকদের মুখেও। শুধু তাই নয়, হাতের কাছে সাতসকালে কৃষক নেতাদের দেখতে পেয়ে এস আই আরের নানা সমস্যা নিয়ে দলে দলে হাজির হয় গ্রামের লোকেরাও। যাদের সাথে কথা বলে আতঙ্ক দূরের দিশা দেখিয়েছেন জেলা সভাপতি সাহেনশা মোল্লা।
সাহেনশা মোল্লা জানালেন, “এস আই আর নিয়ে অকারণে আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামের মানুষ। সেই ভয় কাটাতেই আমরা মাঠে নেমেছি। যে সমস্যাগুলি প্রতিদিন কৃষকরা মুখোমুখি হন, সেগুলো না শুনে সমাধান দেওয়া যায় না। তাই প্রতিটি ব্লকেই আমরা এমন কর্মসূচি করছি।”
গ্রামের কৃষক সুমিতা মাহাত, সুভাষ কুল ও সুনীল পালের কথায়, “আমাদের বহু প্রশ্ন ছিল, কিন্তু বলার মতো কাউকে পাচ্ছিলাম না। আজ মাঠে নেতাদের সামনে পেয়ে সব কথা খুলে বলেছি। পান্তা-পেঁয়াজের পাশে বসেই উত্তরও পেলাম। যেন অনেকটা চাপ কমে গেল। গ্রামবাসীদের কথায়, এভাবে নেতৃত্বকে পাশে পেলে এস আই আর আর ভয়ের নয়, বরং সমাধানের পথ।
উত্তর খাঁপুরের এদিনের সকাল যেন প্রমাণ করল—রাজনীতি যদি মানুষের ঘরে-ঘরে পৌঁছতে চায়, তবে প্রথমে পৌঁছতে হবে মানুষের মাঠে, মানুষের মাটিতে। আজ ঠিক সেই মাটিতেই দাঁড়িয়ে কৃষকদের ভরসা ফিরিয়ে দিল একটুকরো পান্তা-খাওয়া সকাল।




















