বোল্লা মন্দিরের নতুন ইতিহাস! ভক্তের প্রাণ ভরাতে রুপোর মুখে মা এলেন বোল্লার মাটিতে
বালুরঘাট, ২৭ এপ্রিল ——-চারশো বছরের ইতিহাসে প্রথম! ভক্তদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে, রবিবার সকালে বোল্লা মন্দিরে স্থাপিত হল মা বোল্লা কালীর রুপোর মুখমণ্ডল। তিন কেজি রুপোর কারুকার্যে তৈরি মুখাবয়বের সামনে প্রণামে নতজানু হলেন হাজার হাজার ভক্ত। ঢাকের বাদ্যি, শঙ্খের ধ্বনি আর উলুধ্বনির মাঝখানে উৎসবের আবহ যেন ভরে উঠেছিল মন্দির চত্বর।
এদিন সকাল থেকে বালুরঘাটের বোল্লা গ্রামে উপচে পড়ল ভক্তের ঢল। কেউ ফুল হাতে, কেউ দীপ হাতে, কেউ চোখের জল মুছতে মুছতে এসে দাঁড়িয়েছে মায়ের সামনে। ঢাকের তালে তালে নেচে উঠেছে শিশু থেকে বৃদ্ধ — বোল্লার আকাশে বাতাসে যেন ধ্বনিত হয়েছে একটাই শব্দ — “জয় মা বোল্লা!”
মন্দিরের পুরোহিত অরুপ চক্রবর্তী বললেন, “ভক্তরা চাইছিলেন সারাবছর মায়ের দর্শন। আজ সেই চাওয়া পূর্ণ হল। মা এখন সর্বক্ষণ বিরাজ করবেন রুপোর মুখমণ্ডলে।”
পুজো কমিটির দাবি, এদিন ৫৬ রকমের মিষ্টান্ন নিবেদন করা হয়েছে দেবীর ভোগে। বিশেষ যজ্ঞের আয়োজনও হয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে। মন্দির কমিটির ম্যানেজার মানস রঞ্জন চৌধুরীর কথায়, “লক্ষ লক্ষ ভক্তের ভরসা আর মায়ের আশীর্বাদেই আজকের দিনটি সম্ভব হয়েছে।”
রীতি অনুযায়ী রাসপূর্ণিমার পরের শুক্রবার শুরু হয় মা বোল্লার তিনদিনের মহোৎসব। বোল্লা গ্রামে জমে ওঠে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম মেলা। কথিত আছে, বল্লভ চৌধুরীর আমলে এক মহিলা স্বপ্নাদেশে পাথরখণ্ডে মাতৃরূপ দেখেছিলেন। তার পর থেকেই শুরু হয় মা বোল্লার পুজো। পরবর্তী সময়ে মুরারী মোহন চৌধুরী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলায় জয়ী হন মায়ের কৃপায়। কৃতজ্ঞতায় নির্মিত হয় এই মন্দির।
তবে নিয়ম অনুযায়ী পুজোর তিনদিন পর দেবীর নিরঞ্জন হয়। সারাবছর মায়ের দর্শন সম্ভব হতো না। সেই আক্ষেপেই জন্ম নিল রুপোর মুখমণ্ডল — যা আজ থেকে ভক্তির স্থায়ী প্রদীপ হয়ে রইল বোল্লার বুকে।
