বাংলা বললেই পিটিয়ে মারার নিদান!গুরগাঁও থেকে জীবনের আতঙ্ক নিয়ে বালুরঘাটে ফিরলেন এক দিনমজুর ও তার পরিবার
বালুরঘাট, ২১ আগষ্ট —– গুরগাঁওয়ের রাস্তায় বাংলা বললেই যেন মৃত্যুর হুমকি। আর সেই আতঙ্ক নিয়েই অবশেষে সপরিবারে ঘরে ফিরলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের দিনমজুর দুলাল সরকার। শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুলালের অভিযোগ—বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাঁকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে অমানবিক হেনস্থা, এমনকি মারধরের ভয় দেখানো হত। পাঁচ বছর ধরে কাজের সূত্রে হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে থাকলেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় পরিস্থিতি এমন ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায় যে স্ত্রী, কন্যা ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে প্রাণভয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি।
দুলালের কথায়, “বাংলায় কথা বললেই গালি, তাচ্ছিল্য, এমনকি খুনের হুমকি দেওয়া হত। একপ্রকার অসহ্য পরিস্থিতির মুখেই সব ফেলে পালিয়ে আসতে হল।” যে ঘটনা জানাজানি হতেই তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বালুরঘাট শহরে। বিষয়টি জানতে পেরে দুলালের বাড়িতে ছুটে গিয়ে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র। তিনি বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ওখানে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে হেনস্থা করা হচ্ছে। বিজেপি আসলে আগুন নিয়ে খেলা করছে।”
অশোকবাবু আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হওয়া ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে দুলালের নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে। তাঁর দাবি, এ ধরনের হেনস্থার জেরে বহু শ্রমিকই ভিটেমাটি ফেলে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়দের বক্তব্য, এতদিন জেলার নানা প্রান্ত থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের খবর মিলত, কিন্তু এবারে খোদ শহরের ভেতরেই এমন এক পরিবারের ফিরে আসা ঘটনার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, বাংলাভাষীদের উপর লাগাতার এই নির্যাতনের প্রতিকার কোথায়? আর কবে নিরাপত্তা পাবেন ভিনরাজ্যে শ্রমে যাওয়া হাজার হাজার দুলাল সরকাররা?