ঘাসফুল পদ্মের গাঁটছড়া! পতিরামের সমবায় ভোটে তৃণমূল-বিজেপির গোপন আঁতাত, তোলপাড় দক্ষিণ দিনাজপুর
বালুরঘাট, ১১ জুন —– বিজেপির সাথে সমঝোতা, ৬৭ বছর পর পতিরামে সমবায় সমিতির দখল নিল তৃণমূল। ঘটনাকে ঘিরে জোর চর্চা দক্ষিণ দিনাজপুরে। রাজ্যে নজিরবিহীন ঘটনা, বলছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার পতিরাম কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের মনোনয়ন পর্ব জমার শেষ দিনেই পাচ ও চার আসনের সমঝোতা করে সমবায়টির দখল নেয় তৃণমূল ও বিজেপি। গোটা রাজ্যে শাসক দল তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষই বিজেপি। পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পুরসভা, বিধানসভা থেকে শুরু করে লোকসভা নির্বাচন সবতেই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। কিন্তু পতিরামের এই সমবায় নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপির এমন গোপন সমঝোতা কার্যত অস্বস্তি বাড়িয়েছে উভয় শিবিরকে।
১৯৫৮ সালে গঠিত পতিরাম কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট সোসাইটির শেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫-তে। তারপর থেকে প্রশাসকের অধীনে চলছিল সমবায়। চলতি বছরে নতুন করে নির্বাচন ঘোষিত হতেই জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয় সব পক্ষের। কিন্তু মনোনয়ন জমার শেষ দিনে চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়—নয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি তৃণমূল ও চারটি বিজেপি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত! বোঝাপড়ার জেরে ভোট পড়ার আগেই বোর্ড দখল দুই দলের।
শাসক-বিরোধী সমঝোতায় এমন ‘অঘটন’ অভাবনীয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, এটি শুধুই স্থানীয় স্তরের ঘটনা নয়—এতে রাজনীতির ভবিষ্যৎ অভিমুখের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে।
যদিও এনিয়ে কড়া মনোভাব পোষণ করেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল। তিনি জানান, “বিজেপির সঙ্গে কোনও প্রকার সমঝোতা দল মেনে নেবে না। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। ব্লক সভাপতির কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।” তৃণমূলের কোথাও জনপ্রিয়তা না থাকলে সেখানে দল হারবে, কিন্তু কোনভাবেই বিজেপির সাথে সমঝোতা করবে না।
অন্যদিকে, বিজেপির জেলা নেতৃত্বের মুখে কুলুপ। দলের জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মন্ডল সভাপতি ছোটন চক্রবর্তী অবশ্য জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
পতিরাম কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের ম্যানেজার হিমালয় বিশ্বাস বলেন, এতদিন ইলেকশন হলেও এবারে সিলেকশনের মাধ্যমে সমবায় গঠিত হয়েছে। নয়টি আসনের মধ্যে ৫ টি তৃণমূল ও ৪ টি বিজেপি। উভয়দলের সদস্যদের মধ্যে সমঝোতা বাইরে হয়ে থাকলে তাদের কিছু বলার থাকে না।
তবে এমন ‘চুপিসাড়ে বোঝাপড়া’ মানতে নারাজ স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশও।
এনিয়ে পতিরাম পঞ্চায়েত প্রধান তথা ওই সমবায়ের সদস্য পার্থ ঘোষ জানিয়েছেন, “আমার জানা মতে নির্বাচন হবার কথা ছিল।”
রাজনীতির শুদ্ধতায় এই সমঝোতা এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন। পতিরামে যা ঘটল, তা কি নিছক ব্যতিক্রম? নাকি নিচুতলার ‘ভোটের সমীকরণে’ জোটের আগাম ইঙ্গিত? আপাতত সেই উত্তর খুঁজছে গোটা জেলা।