প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বর্ণকমল মিত্রের এলাকায় গঙ্গারামপুরের দূর্গাবাড়ী সার্বজনীন দুর্গাপুজো হচ্ছে ভক্তি ও নিষ্ঠা সহকারে
শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট, ৩১ আগস্ট।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর পুরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের দূর্গাবাড়ী এলাকায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী সার্বজনীন দুর্গাপুজো। স্থানটি একসময় ছিল শ্মশান। কথিত আছে, কয়েক শতক আগে এক সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন।পরে জমিদারেরা এই পুজোর দায়িত্ব নেন। বর্তমানে এই পুজোর আয়োজন হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে, তবে মন্ত্রীর পরিবারও দেখাশোনা করেন।লোকমুখে প্রচলিত আছে দেবী এখানে জাগ্রত। তাই গঙ্গারামপুরের অন্যসব দুর্গাপুজো ঘুরে দেখার পরও দূর্গাবাড়ী মণ্ডপে না গেলে পুজো-দেখা অসম্পূর্ণ থাকে—এমনই অভিমত ভক্তদের। জাঁকজমক না থাকলেও নিয়মনিষ্ঠা আর ভক্তিভাবেই এই পুজোর মূল আকর্ষণ। কমিটির তরফে জানা যায়, অন্তত ৫০৩বছর আগে এই দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। অষ্টমীতে প্রায় তিন হাজার ভক্ত মায়ের চরণে অঞ্জলি দেন। একই পুরোহিত ও প্রতিমাশিল্পী প্রজন্ম ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। দশমীতে শহরের আশ্রমঘাটে ভক্তদের কাঁধে চড়ে মায়ের বিসর্জন হয়। এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রয়াত স্বর্ণকমল মিত্রের বড় ছেলে প্রলয় মিত্র জানান, একসময় এই পুজোমণ্ডপের পিছনে অনুশীলন সমিতির ব্যায়ামগার ছিল।স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গোপনে সেখানে বৈঠক করতেন এবং মায়ের আসনে পুজো দিয়ে শপথ নিতেন। তিনি আরও জানান, প্রাচীনকালে ডাকাতেরাও এখানে এসে বলি দিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে ডাকাতি করতে যেত।আবার অনেক ভক্তের দুরারোগ্য রোগও নাকি এখানে আশীর্বাদে সেরে উঠত। পুজোতে সামিল হন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী পুত্র তথা রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সহ তার পরিবারের সকলেই।
পুজো কমিটির সম্পাদক তথা গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র জানান,“শাক্ত মতে পুজো হয় এখানে। আগে নবমীতে ১০-১৫টি পাঠাবলি হত, তবে এখন আর তা হয় না। পরিবর্তে কুমড়ো, কলা, কুশুল বলি হয়। এই পুজোর জন্য ভক্তরা স্বেচ্ছায় মায়ের খরচ, মূর্তি বা ঢাকের ব্যবস্থা করেন। কোথাও থেকে চাঁদা তুলতে হয় না।”
এলাকার যুবক রতন বাবু জানান,”পুজোর সময় মায়ের কাছে না আসলেই মন ঠিক থাকে না।মা সবার মনের বাসনা পূর্ণ করে থাকেন।”
এবছরও যে এই পুজোতে ভক্তদের ভিড় থাকবে সে বিষয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।