কোচবিহারের মহারাজাদের শুরু করা বড় দেবীর পূজা। কোচবিহারে পূজা সংখ্যা কম এমনটা নয়। কিন্তু রাজার জেলা কোচবিহার । যার ফলে রাজপরিবারের থেকে চলে আসা 500 বছর উপরে প্রাচীন পূজা রক্তবর্ণ কোচবিহার বড় দেবীর দর্শন না করলে পূজা পরিক্রমা সম্পূর্ণ হয় না

0
510

কোচবিহার:- কোচবিহারের মহারাজাদের শুরু করা বড় দেবীর পূজা। কোচবিহারে পূজা সংখ্যা কম এমনটা নয়। কিন্তু রাজার জেলা কোচবিহার । যার ফলে রাজপরিবারের থেকে চলে আসা 500 বছর উপরে প্রাচীন পূজা রক্তবর্ণ কোচবিহার বড় দেবীর দর্শন না করলে পূজা পরিক্রমা সম্পূর্ণ হয় না কোচবিহার বাসির। এটাই পরম্পরা । রাজ আমলের নিয়ম মেনেই পূজা অনুষ্ঠিত হয় কোচবিহার দেবী বাড়ি অবস্থিত বড় দেবীর মন্দিরে । গত বছর থেকে করণা পরিস্থিতি থাকলেও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম হলেও পূজায় নিয়মে কোনরকম খামতি নেই। এই বছরও পূজার প্রস্তুতি চলছে জোড় কদমে । বর্তমান কোচবিহার জেলা প্রশাসন তথা দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড এই পূজা করে আসছেন ।


জানা গিয়েছে বড় দেবীর পূজার সূচনা কোচ বংশের প্রথম রাজা সিংহ হাত ধরে । তবে বড় দেবীর বর্তমান রূপ এসেছে মহারাজা নর নারায়ণের সময় থেকে । রাজ পরিবার ইতিহাস সূত্রে জানা গিয়েছে, বাল্যকালে আসামের চিকনা পাহাড়ে মহারাজা নিজের সঙ্গীদের সঙ্গে খেলছিলেন ।সেই সময় তিনি এক টুকরো ময়না কাঠ কে দেবী রূপে পূজা দেন ।সেই পূজায় দেবীকে খুশি করতে খেলার ছলে এক সঙ্গীকে কেন্দু পাতা নকল খরগ তৈরি করে গলায় আঘাত করেন ।সেই আঘাতে বালকের ধর ও মুন্ডু ছিন্ন হয়ে যায় । পরে দেবী স্বপ্নাদেশে ভগবতী রূপে পূজা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর শুরু হয় পূজা ।সেই মোতাবেক আজ শ্রাবণের শুক্লা অষ্টমীতে ময়না কাঠ কোচবিহার ডাঙ্গরাই মন্দিরে দেবী রূপে পূজিত হন ।সেই দিন থেকে শুরু হয়ে যায় কোচবিহার বড় দেবী পূজার সূচনা ।ডাঙ্গরাই মন্দিরে ময়না কাঠ পূজা দেওয়ার পর সেই দিন বিকেল ময়না কাঠ কে মদনমোহন বাড়িতে নিয়ে আসা হয় । সেখানে একমাস পূজা হবার পর রাধা অষ্টমী দিন দেবীরূপে ময়না কাঠ কে দেবী বাড়ি-মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। এরপর শুরু হয় মূর্তি তৈরি কাজ। রাজ আমল থেকে এই মূর্তি তৈরি করে আসছেন চিত্রকর পরিবার ।দেবীর বর্তমান রূপ নিয়ে কথিত আছে অসম যুদ্ধে যাওয়ার সময় মহারাজা নর নারায়ন কে স্বপ্নে বর্তমান রূপ দেখা দেন ।এরপর তিনি সংকোষ নদীর পাড়ে রক্তবর্ণ দেবী মূর্তি গড়ে পূজা দেন। সেই পূজা পরবর্তী রাজ মহল দক্ষিণ দিকের এক জায়গায় আনা হয়। পরবর্তী সেখানেই ১৯১৫সালে মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ান মন্দির তৈরি করেন। বড় দেবী মন্দির । বর্তমানে এ পূজা আয়োজন ও পরিচালনা দায়িত্ব রয়েছে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড। যার সভাপতি পদমর্যাদায় কোচবিহার জেলা শাসক ।


বড় দেবীর পূজা একসময় নরবলি হত । তবে বর্তমান নরবলি বন্ধ করে অষ্টমীতে মোষ বলি হয় । তবে আজও অষ্টমীর রাতে গুপ্ত পূজার মধ্য দিয়ে নর রক্ত দেবী কে উৎসর্গ করার রীতি রয়েছে । সেই সময় দর্শনার্থীদের সামনে পর্দা ফেলে দেওয়া হয় । কয়েক প্রজন্ম ধরে দেবীকে রক্ত উৎসর্গ করে আসছেন কালজানি এলাকার এক পরিবার । এছাড়া দেবীর পূজা তে প্রতিদিনই পাঠা, পায়রা ,মাগুর মাছ বলি দেওয়া হয়। মহা অষ্টমীতে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড সভাপতি তথা কোচবিহার জেলা শাসক বিশেষ পূজায় অংশ নেন। তিনি অঞ্জলী দেওয়ার পর সাধারন মানুষ অঞ্জলি দেন ।প্রথা মেনে দশমীতে বড় দেবী বিসর্জন হয় । তার আগে সকাল থেকে প্রচুর মানুষ মাকে সিঁদুর পরানোর জন্য ভিড় করেন । মন্দির চত্বরে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন ।


আর পাঁচটি দেবী প্রতিমার তুলনায় বড় দেবীর আদল অনেকটাই ভিন্ন । লক্ষ্মী গণেশ কার্তিক সরস্বতী বদলে বড় দেবীর সঙ্গে থাকেন তার দুই সখী জয়া ও বিজয়া । বাহন বাঘ ও সিংহ অসুরকে কামড়ে ধরে থাকে । জড়িয়ে থাকে প্রকাণ্ড আকারে সাপ । বড় দেবীর পূজার সাথে জড়িয়ে রয়েছে কোচবিহার জেলার মানুষের আবেগ । রাজপুরোহিত বীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যী জানিয়েছেন বিধি-নিষেধে থাকলেও নিয়ম-রীতি রেওয়াজ কোনরকম পরিবর্তন হবে না। রাজ আমলের পরম্পরা মেনে পুজা অনুষ্ঠিত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here