৫ বছর ধরে গাছে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। দিনের পর দিন অভুক্ত পরিবার। মেলে না রেশন,সরকারি সাহায্য। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যন্ত্রণা থেকে মুক্তির কাতর আবেদন পরিবারের

0
1287

মালদা;;০২আগস্ট:-প্রায় ৫ বছর ধরে বাড়ির সামনে গাছের সাথে শেকল বাঁধা যুবক। শেকল বেঁধে থাকতে থাকতে দগদগে ঘা হয়ে গেছে পায়ে। কোনও চতুস্পদ পোষ্যর থেকেও দূর্বিষহ জীবন। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের একবালপুর গ্রামের ঘটনা।পরিবারের দাবি,যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। ওঝা গুনি থেকে শুরু করে চিকিৎসক সকলের কাছেই ছুটতে ছুটতে আজ কপর্দকহীন পরিবার। নিয়মিত রোজকার অন্ন জোগার করাই এখন দায় হয়েছে। ঘরের বাইরে ওই যুবককে শেকল বেঁধে রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই। শাসকদলের গ্রাম-পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়ে, প্রধান, মেম্বারের হাতে পায়ে ধরেও ফল হয়নি। বিধায়ক, জেলা পরিষদ সদস্যকে বহুবার বলার পরেও ঘুরে তাকান নি কোনও জন-প্রতিনিধি। তৈরি হয়নি যুবকের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট। চিকিৎসার ব্যবস্থা দূর অস্ত সরকারি রেশনটুকুও যথাযথ পায় না পরিবার। ২০১৭ সালে বন্যায় সর্বস্বান্ত হলেও মেলেনি সরকারি সাহায্য। আবাস যোজনায় নাম তোলার আবেদন করতে গেলেও মুখ ফিরিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য থেকে প্রশাসনের আধিকারিকরা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ক্যামেরার সামনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কেঁদে কেঁদে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন যুবকের পরিবার।

যুবকের নাম সেলিম আকতার। বয়স (১৯)। জরাজীর্ণ মাটির বাড়ির সামনে একটা গাছে শেকল বাঁধা। দিনের পর দিন।বছরের পর বছর। বৃষ্টি হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে ঘরের দাওয়ায়,নচেৎ গাছের নীচেই ঠিকানা। শেকল ক্রমশ শরীরে চেপে বসে তৈরি করেছে দগদগে ঘা। ধুলো ময়লা,আবর্জনা, মাছি বিষাক্ত করে তুলেছে সেই ঘা।বিষ ছড়িয়ে পড়ছে শরীর জুড়ে। সেলিমের দাদা হারুন রশীদ এবং মা লাইলি বিবিও মানসিক ভারসাম্যহীন। ঘর ছাড়া তাঁরা। গ্রামের লোকজন কখনো তাঁদের দেখতে পান কখনো পান না। ছোটো ভাই আসিফ সুস্থ। বাবা জাকির হোসেন আর ঠাকুর্দা আব্দুল হক দিনমজুর। আর তা দিয়েই চলে সংসার।এখন করোনা লকডাউনে সেই রোজগারও প্রায় নেই বললেই চলে। রেশন কার্ড মাত্র একজনের নামেই রয়েছে। তাও জাকিরের দাদার নামে। সেই রেশন তুলে এনে ভাগাভাগি করেই চলে সংসার। রেশন কার্ড করার জন্যে বহুবার দরবার করেও ফল হয়নি। কষ্ট করে যে ঘর তৈরি করেছিল জাকির তাও গত ২০১৭ সালের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কোনক্রমে ধার দেনা করে মাটির চালাঘর করেই দিন গুজরান।এই অবস্থায় সেলিমকে চিকিৎসা করার সামর্থ্য কোথায়? জাকির ও তাঁর বাবার অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান,বিধায়ক,জেলা পরিষদ সদস্য, এলাকার শাসক দলের নেতাদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেও কোনও ফল হয়নি।কেউ মুখ তুলে তাকায় নি। বন্যার সময়েও মেলে নি সরকারি সাহায্য। জোটে নি সামান্য ত্রিপলটাও। পরবর্তীতে আবাস যোজনার জন্যে নাম তোলাতে গেলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। সেলিমের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট তৈরির জন্যে বহুবার দরবার করেও লাভ হয়নি। কোনও সরকারি মানসিক চিকিৎসালয়ে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্যে বলতে গিয়ে একরকম ঘাড় ধাক্কাই খেতে হয়েছে।

দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে যখন এই পরিবার তখন অন্যদিকে তাঁদের নিয়ে তরজায় মাঠে নেমে পড়েছে দুই যুযুধান রাজনৈতিক দল,তৃণমূল আর বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ তৃণমূল আসলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।গরীবের খোঁজ ওরা রাখে না।কাটমানির সরকার। অন্যদিকে পাল্টা অভিযোগ তুলে তৃণমূলের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে গরীবের স্বার্থের সরকার। তাই দলগত ভাবেই ওই পরিবারের পাশে সব রকম ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমানের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here