শীতল চক্রবর্তী গঙ্গারামপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ দিনাজপুর:-কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাসকারী ২০ টি পরিবারের প্রায় ৬৪ জন বাসিন্দা পড়েছেন চরম সমস্যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের সুকদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মল্লিকপুর সীমান্তবর্তী এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কথামতো বেশ কয়েক মাস আগে নিজেদের টাকা দিয়ে জায়গা কিনেও তাদের পড়তে হয়েছে চরম সমস্যায়। কোন উপায় না দেখে সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রামবাসীরা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে সমস্যা সমাধানের জন্য লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য থেকে সুপারভাইজারেরা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। শাসক দলের নেতা থেকে বিজেপির সাংসদেরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশাসনের তরফেও সংবাদমাধ্যমের কাছে জানার পরে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এই সমস্যা এখন কিভাবে সমাধান করা যায় সেদিকে তাকিয়ে সকলেই।

গঙ্গারামপুর ব্লকের ১ নম্বর সুকদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মল্লিকপুরের সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বহুদিন ধরে বসবাসকারী রায় সম্প্রদায়ের প্রায় ৫৭টি পরিবারের বসবাস ছিল। তারা সেখানে কোনো মতে কৃষিকাজ করে প্রশাসনের নিয়ম মেনে বসবাস করে আসছিল নানা অসুবিধার মধ্যে দিয়ে। ২০১০ সালের পর থেকে প্রশাসনের মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে মোট ৫৭টি পরিবারের মধ্যে ৩৭টি পরিবারের জন্য ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে স্থায়ী ঠিকানা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে ওই ৩৭ টি পরিবারের জন্য মল্লিকপুর মহুয়াতলাতে জায়গা কিনে দিয়ে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দেন সরকারি খরচে। বাকি সেখানে থাকা প্রায় 20টি পরিবারের ৬৪ জনকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয় তাদেরকে কিছুদিনের মধ্যেই কাঁটাতারের বেড়ার ওপার থেকে এপাড়ে স্থায়ী ঠিকানা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু ৩ বছর পার হবার পরে কাঁটাতারের বেড়ার উপরে থাকা সেই ২০টি পরিবারের ৬৪ জন বাসিন্দারা বিডিও অফিস থেকে শুরু করে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে তাদের জুতোর সুখতলা ক্ষয় করার পরে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়,বাসিন্দারা নিজেরা জমি কিনে দিলে প্রশাসন বাকি ব্যবস্থা করবে। বাসিন্দারা কোন উপায় না দেখে প্রশাসনের কথা মত নিজেদের টাকা দিয়ে জায়গা কিনব সেই সমস্যা সমাধান করতে পারছে না প্রশাসনের আধিকারিকরা বলে অভিযোগ তাদের। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের মাধ্যমে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেও মেটেনি সমস্যা বলে অভিযোগ । তাই গ্রামবাসীরা শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না দেখে বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা সমাধানের আশায় বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেঘুরে বেড়াচ্ছি, লকডাউন এর সময় অতি কষ্টে পার করার পরে।

কাঁটাতারের ওপারে বসবাসকারী বাসিন্দা অমল রায়, উত্তম রায়, জগাই রায়, কালোমনি রায়েরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, কাঁটাতারের বেড়া নির্দিষ্ট সময়ে খোলা হয় বিএসএফের তরফে। প্রশাসন আমাদের যে আশ্বাস দিয়েছিল তা পূরণ করুক। সমস্যার মধ্যে আছি বলেই এখানে আমরা আর থাকতে চাইছি না। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন জায়গায় দ্বারস্থ হয়েছি। মল্লিকপুর এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তরুণ রায় জানিয়েছেন, আলোচনা করে প্রশাসনের মাধ্যমে মিটিং করে বাসিন্দারা জমি কিনে দিলে কলোনি গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। গ্রামবাসীদের সমস্যায় ফেলে দিয়ে এখন তিনি কোন কথা শুনছেন না। প্রয়োজনে আমি গ্রামবাসীদের নিয়ে নবান্ন পর্যন্ত যাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।

মল্লিকপুর এলাকার সুপারভাইজার তথা এই এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী উদয় রায় জানিয়েছেন, মানুষজনদের এই সমস্যার বিষয়টি সমস্ত জায়গায় জানানো হয়েছে। প্রশাসন সমস্যা আরো বেশি তৈরি করে দিয়েছে ওই সমস্ত মানুষজনদের।তাই গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় দ্বারস্থ হয়েছি।
বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, বিষয়টি আপনার কাছে জানতে পারলাম।সমস্যায় পড়া গ্রামবাসীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিনয় বর্মন বলেন, সমস্যার বিষয়টি উপরে বলা হবে। গঙ্গারামপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দাস জানিয়েছেন, সমস্যা যেন দ্রুত মেটানো যায় তার জন্য সব চেষ্টা করব।
গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক মানবেন্দ্র দেবনাথ জানিয়েছেন, সমস্যার বিষয়টি ব্লকের বিডিও কে দেখতে বলা হয়েছে।যেন এমন সমস্যা মিটানো যায় তার চেষ্টা করা হবে।
এখন দেখার এটাই যে,বাসিন্দাদের দাবি মেনে কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হয় সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে সকলেই।