শীতল চক্রবর্তী গঙ্গারামপুর, ৮ই ফেব্রুয়ারি, দক্ষিণ দিনাজপুর:-শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ধলদিঘির দক্ষিণ পাড়ে সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরের মাজারে প্রতিবছরের মতো এবারও বসেছে ঐতিহাসিক উরুষ মেলা। শুধু মুসলিম ভক্তরাই নন, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচুর ভক্তরা এমন অনুষ্ঠানে এসে মঙ্গল কামনা প্রার্থনা করে মাজারে সিন্নি চড়িয়ে থাকেন। সমস্ত বক্তাদের তরফে দেওয়া হল সিন্নিও। অনুষ্ঠানকে ঘিরে বসেছে বিরাট আকারের মেলা। যা বেশ কিছুদিন ধরে চলবে বলে জানা গেছে। উৎসবের উৎসাহ বাড়াতে বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে।

সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরের ষষ্ঠ পুরুষ সৈয়দ আমজাদ আলিসা ফকিরের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে যে, ১৮১২ সালে এই মেলাটির সূত্রপাত হয়। প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এমন মেলা হয়ে আসছে। জিন্দাপীর সৈয়দ করিম আলী চাট শাহী ফকিরের স্ত্রী পদ্মমণি ঠাকুরের সমাধি স্থল রয়েছে তার সমাধীস্থল এর পাশেই। এই দিনটিতে সেখানে চলে নাম সংকীর্তন ও। ওই সময় অভিভক্ত দুই বাংলার ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রী নিয়ে মেলায় আসতেন। বিহারের পূর্ণিয়া, কিশান্গঞ্জ থেকে হাতি, ঘোড়া, উট নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময় বস্তু পশু মেলা। বিনোদনের জন্য কলকাতার যাত্রা, পুতুল নাচ, জাদু, সার্কাস ইত্যাদিও আস্ত। দুই বাংলা ভাগ হওয়ার পরেও ১৯৮০ সালেও জমজমাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানে। তখন মেলা পরিচালনা করতেন সৈয়দ মেছারত আলি এবং তার মৃত্যুর পর সৈয়দ ওয়াবের আলিসা ফকির। কিন্তু উভয়ে মারা যাবার পর সেই ধরনের জমজমাট মেলা বন্ধ হয়ে যায়।

সৈয়দ করিম আলিসা ফকির তার গুরুদেবের নির্দেশে ধলদিঘির দক্ষিণপাড়ে এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।তিনি একটি ঘরে ধ্যানমগ্ন থাকতেন সারাবছর।২৫ মাঘ শুক্লাতিথির কাকভোরে ধলদিঘিতে স্নান করে চটবস্ত্র পড়ে বাহিরে এসে অগণিত হিন্দু মুসলিম ভক্তদের নিয়ে ধর্মীয় আলোচনা করতেন। তখন থেকেই মেলার সূচনা হয় বলে দাবি তাদের। সৈয়দ করিম আলিশা ফকিরের বংশধরদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে যে, ১৯৯৫ সাল থেকে সৈয়দ করিম আলীসা ফকিরের ষষ্ঠ পুরুষ এই মেলা দায়িত্ব পালন করে আসছে। আগের মত এখন বিশাল মেলা না হলেও বর্তমানে মালদাহ দুই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রী নিয়ে মেলায় আসেন। এবারও সোমবার সকাল থেকেই বুঝতে শুরু করেছে দোকানপাট গুলি। এসেছে সার্কাস, ম্যাজিক সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন রবিবার সকালে ধলদীঘিতে স্নান সেরে পীরের মাজারের শিন্নি দিয়ে মেলাতে রান্না খাওয়া করেছেন এবং মেলা উপভোগ করছেন।

সৈয়দ করিম আলী টাটসাহি ফকিরের পঞ্চম বংশধর মাসুদ আলী সা ফকির জানিয়েছেন, এই উৎসবের বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।সেই টানে হিন্দু-মুসলমান সমস্ত ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন। আগের মত এতদিন ধরে মেলা না হলেও ভক্তি নিষ্ঠা রয়েছে প্রচুর।
মেলাতে আসা দুই হিন্দু ভক্ত মিনতি মুরমু, বাপি হাজরা জানান, মনের মানত পূরণ হয় তাই এই দিনটির দিনে এবছর এখানে এসেছি।
মেলাতে আশা আরো দুই মুসলিম ভক্তরা জানিয়েছেন, বাবার কৃপায় আমার মনের বাসনা পূরণ হয়েছে, তাই প্রতিবছর এখানে আসি আর বাবার মাজারে শিন্নি চড়ায়।
তবে আগের মত এখন আর বহুদিন ধরে মেলা না হলেও কয়েকদিনের মেলায় ভক্তি নিষ্ঠার পাশাপাশি বিনোদনের খামতি থাকে না সেখানে।এককথায় দুই সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র ধল দিঘি রবিবার যেন এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, হিন্দু তার নয়ন মনি মুসলিম তার প্রাণ।