ময়দায় ভর্তি মিষ্টি, জলে ভরা দুধ! বালুরঘাটে ভেজালের হুলুস্থুল কান্ড, আধিকারিকদের দেখতেই বালতি ফেলে পালাল দুধ ব্যবসায়ীরা
বালুরঘাট, ১ ডিসেম্বর —— ময়দায় ভর্তি মিষ্টি, জলে ভরা দুধ! বালুরঘাট শহরজুড়ে ভেজাল খাদ্যে চোখ কপালে উঠার জোগাড় খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের। ভয়ে দুধের বালতি ছেড়ে পাললো অধিকাংশ দুধ ব্যবসায়ীরা। সোমবার বালুরঘাটের দুধ বাজারে খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের আচমকা হানায় রীতিমতো হুলুস্থুল কান্ড শহরজুড়ে। সরকারী আধিকারিকদের হাতে ল্যাক্টোমিটার দেখতেই দুধের বালতি ফেলে পালালো দুধ ব্যবসায়ীরা। পরে সেই পরিত্যক্ত দুধ বাজেয়াপ্ত করে গাড়িতে তুলে নেয় দপ্তরের আধিকারিকরা। মিষ্টিতেও মিলছে ময়দার হদিস। কার্যত ছানা বা ক্ষীরের বদলে যেন ময়দাই খাচ্ছেন বালুরঘাটবাসী। অভিযানে বেরিয়ে চোখ ছানাবড়া আধিকারিকদের।
এদিন পরীক্ষায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়েছে—অনেক দুধের ঘনত্ব মাত্র ২০–২৫ মার্ক, যেখানে স্বাভাবিক মান হওয়া উচিত ৩০। অর্থাৎ, অতিরিক্ত জল মেশানো দুধের অভিযোগ প্রায় নিশ্চিত। ছানা বা ক্ষীরের বদলে যেন দুধের মধ্যে জল খেলছে!
দুধের পাশাপাশি মিষ্টিতেও মিলেছে ময়দার হদিস। রসগোল্লা, সন্দেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিষ্টিতে ময়দার পরিমাণ এতটাই বেশি যে, নির্দিষ্ট রাসায়নিক পরীক্ষার পর রং হয়ে যাচ্ছে কালচে। মিষ্টি কমলা হলে বুঝতে হবে তাতে ময়দা নেই।
খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের নবনীতা মজুমদার নেতৃত্বে একাধিক আধিকারিক শহরের দুধবাজার এবং মিষ্টির দোকান পরিদর্শন করেন। ব্যবসায়ীদের নাম লিপিবদ্ধ করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন। বালুরঘাট ব্যবসায়িক সমিতি স্পষ্ট জানিয়েছে, ভেজাল দুধ ও মিষ্টির ক্ষেত্রে কোন আপোষ করা হবে না।
সাধনা মোড় সংলগ্ন রাস্তার ধারে সকাল থেকেই ভিড় জমে দুধ কিনতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এক দুধ ব্যবসায়ী নারায়ণ মণ্ডল বলেন, ‘ক্রেতারা কখনও অভিযোগ করেননি। দুধ সরাসরি বাজারে আনি। পরীক্ষায় ফেল হওয়ায় আমিও হতবাক।’
প্রকৃতপক্ষে এই অভিযান সাধারণ মানুষের জন্য সতর্কবার্তা। শহরের বাজারে ভেজাল দুধ-মিষ্টি এখনই ধরতে পেরে খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর সতর্কবার্তা জারি করেছে। বালুরঘাটবাসীকেও এখন সচেতন হতে হবে—খাবারের পেছনে ভেজালের ছায়া কম নয়।

















