স্কুল ও হোস্টেলের ছাত্ররা নেশায় জড়িয়ে পড়ছে, ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়,উদ্বেগ সর্বত্রই ।কড়া ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস প্রশাসনের
শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট ।২২ নভেম্বর,দক্ষিণ দিনাজপুর।স্কুল–কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে নেশার করার প্রবণতা।ডেনড্রাইট আঠা, গাঁজা থেকে শুরু করে হিরোইন,সব ধরনের বিপজ্জনক নেশায় জড়িয়ে পড়ছে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা। বিশেষ করে হোস্টেলে থাকা কিশোরদের মধ্যে নেশার প্রভাব দ্রুত বাড়ছে বলে অভিযোগ।
সাম্প্রতিক একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই নতুন করে শোরগোল পড়ে গেছে জেলার শিক্ষামহলে।গঙ্গারামপুর শহরের বাসিন্দা দেবব্রত সাহা তার ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন সেখানে সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলের হোস্টেলের পাঁচজন ছাত্রকে গঙ্গারামপুরের পুনর্ভবা শিববাড়ি নদী সংলগ্ন ঘাটে ডেনড্রাইট আঠার নেশা করতে দেখা যায়।ভিডিওতে দেখা যায়, প্রতিদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে ওই ছাত্ররা শিববাড়ি এলাকার পুনর্ভবা নদীর ধারে বসে নেশা করছে। দেবব্রত বাবু তার ফেসবুক পোস্টে সেই ভিডিওর আপলোড করে লিখেছেন—
“প্রতিদিন একই ছবি দেখা যাচ্ছে।হোস্টেলের পড়ুয়ারা স্কুল এড়িয়ে নেশার জালে জড়িয়ে পড়ছে। অভিভাবক ও হোস্টেল সুপারের আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন।”
প্রাথমিক থেকে হাইস্কুল,সবস্তরেই বাড়ছে নেশার ছায়া।
জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে,জেলায় মোট ২,২৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।এর মধ্যে ১,১৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়,যেখানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১,০৭,৮৩৫ জন।
৩১০টি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ৭৩,৪১২ জন ছাত্রছাত্রী।
এসএসকে আছে ৬৫২টি,ছাত্রছাত্রী ৩০,৪৬৫ জন।এমএসকে আছে ৪০টি,ছাত্রছাত্রী ৩,৬৭৯ জন।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক মাদ্রাসা ২০টি,ছাত্রছাত্রী ৪,৭৩০ জন।এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি ক্যাটারিং ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আরও ২০০০’র বেশি ছাত্রছাত্রী শিক্ষা নিয়ে থাকেন।
জেলাজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪৬টির মতো হোস্টেল রয়েছে।অভিযোগ,বেশিরভাগ হোস্টেলই চলছে অনিয়ম ও পর্যাপ্ত নজরদারি অভাব।ঠিক এই সুযোগেই কচিকাচারা সহজেই নেশার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সুযোগে সেখানকার ছাত্ররা
নদীরপাড়,নির্জন,গাছতলা,খোলামেলাভাবে চলছে নেশা খাবার কারবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ,কখনো নদীর ধারে,কখনো গাছতলায়
আবার কখনো স্কুলের বাইরে নির্জন জায়গায় বসে ডেনড্রাইট, গাঁজা, সিগারেট, বিড়ি ও এমনকি হিরোইন পর্যন্ত সেবন করছে বহু ছাত্র।স্কুল শিক্ষক ও পুলিশ প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবেই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।অভিভাবকদের আবেদন,‘জরুরি ভিত্তিতে কাউন্সেলিং প্রয়োজন’
বিভিন্ন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদ জানান,নেশার প্রবণতা দমন করতে স্কুলে নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন সেই সঙ্গে
হোস্টেলে সিসিটিভির নজরদারি,নিয়মিত র্যান্ডম চেকিং,নেশা-বিরোধী কর্মশালা,অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।
সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন,“ভিডিওটি দেখেছি। ছাত্রদের সচেতন করা হবে এবং হোস্টেলে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।”
জেলা বিজেপি সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন,“বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা ব্যবস্থার অবক্ষয় হচ্ছে।তার ফলে স্কুলে নেশা-সংস্কৃতি দানা বাঁধছে।”
সিপিএম জেলা সম্পাদক নন্দলাল হাজরা মন্তব্য করে বলেন,“স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে যৌথভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
জেলা কংগ্রেস নেতা নন্দন দাস বলেন,“ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।স্কুল, অভিভাবক ও প্রশাসনের উদ্যোগ ছাড়া আটকানো সম্ভব নয়।”
তৃণমূল জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল জানান,“ঘটনাটি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলব।”
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবাশীষ সমাজদার ও ডিপিএসসি চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদা জানিয়েছেন,
“বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা পুলিশ সুপার বলেন—
“ভিডিওটি পরীক্ষা করে ইতিমধ্যে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে।দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”




















