আড়াই ফুটের ছোটনের জীবনে ‘ফেসবুক-চমক’!

0
58

আড়াই ফুটের ছোটনের জীবনে ‘ফেসবুক-চমক’! তিন ফুটের নন্দিনীকে বিয়ে করতেই উৎসবে ফেটে পড়ল ভাটপাড়া

বালুরঘাট, ১৬ নভেম্বর —-আড়াই ফুটের দীপঙ্কর ও নন্দিনীর বিয়েই যেন ইতিহাস গড়েছে ভাটপাড়ার আমতলী গ্রামে। খোলা আকাশের নিচে, টিন-ত্রিপলের জরাজীর্ণ ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে জীবনযুদ্ধের সাহসী গল্প লিখে ফেললেন আড়াই ফুট উচ্চতার দীপঙ্কর বর্মন ওরফে ছোটন। যাকে দেখে সবাই বলত—“এ জীবনে সংসার হবে কি?”—সেই ছেলেই আজ হাত ধরলেন তিন ফুট উচ্চতার নন্দিনী করমোদককে। আর এই মিলন সম্ভব করল একটাই জিনিস—ফেসবুক।

হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা দীপঙ্কর বর্মন ওরফে ছোটন বাজনা বাজিয়েই সংসার চালান। বয়স নয়, উচ্চতাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা। পরিবারও মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটিয়েছে—“ছেলের মতো উচ্চতার মেয়ে পাওয়া কি সত্যিই সম্ভব?”

অবশেষে প্রায় এক মাস আগে ম্যাসেঞ্জারের ভিডিও কলে দেখা হয় দুর্গাপুরের বাসিন্দা চন্ডী করমোদকের মেয়ে নন্দিনী করমোদকের সঙ্গে। প্রথম কথাতেই দু’জনের এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা। নন্দিনীর চোখে ছোটনের মন জিতে নেওয়া লাজুক হাসি, আর ছোটনের চোখে নন্দিনীর সহজ গ্রহণযোগ্যতা। সেই মুহূর্তেই কাছাকাছি আসে দু’টি হৃদয়।

এরপর দুই পরিবারের আলোচনা, সম্মতি। শাস্ত্রমতো বিয়ে। যে বিয়ের খবর যতই ছড়িয়ে পড়ছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে পুরো আমতলী গ্রাম। নবদম্পতিকে এক নজর দেখতে ঢল নেমেছে স্থানীয়দের। কেউ ফুল দিচ্ছে, কেউ আশীর্বাদ। কেউ আবার বলছেন—“উন্নয়নের ছোঁয়া এতদিনেও ওই পরিবারটিতে না পৌঁছানো সত্যিই লজ্জার। সরকার ও সকলেরই দাঁড়ানোর উচিত পরিবারটির পাশে।”

তবে ছোট্ট নন্দিনীর মুখে শান্তির হাসি— তিনি বলেন, আমার বিয়ে নিয়ে বাবা-মা খুব চিন্তায় ছিলেন। ভিডিও কলে ছোটনকে দেখেই মনে হলো—এই মানুষটাই আমার।”

দীপঙ্কর বললেন, অনেকদিন ধরে বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছিলাম। আমার উচ্চতায় কেউ মিলছিল না। বন্ধুর সাহায্যে নন্দিনীর খোঁজ পাই। এখন মনে হচ্ছে ভাগ্য খুলে গেছে।
দীপঙ্করের বৃদ্ধ দাদু দধি বর্মন বলেন, ছোট থেকেই নাতিকে নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলেন তারা। ভগবান তার জন্যই নন্দিনীকে খুঁজে দিয়েছে। তাদের বিয়ে হওয়াতে সকলেই এখন খুশি।
দীপঙ্করের মা কল্পনা রায় বর্মন বলেন, জন্মের পর থেকে ছেলে ওরকম ছোট্ট থাকায় সকলেই তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল। বড় হবার পর তার বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তা আরো বাড়ে। অনেক খোঁজাখুজির পর অবশেষে তার মতো উচ্চতার মেয়ের খোঁজ মেলায় তাদের বিয়ে দিয়েছেন তারা। গোটা গ্রামে এই বিষয় এখন যথেষ্ট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা চান সরকার তার ছেলে ও ছেলে বউ এর পাশে দাড়াক।
গ্রামের প্রতিবেশীরাও আনন্দে আত্মহারা।টিনা বর্মন ও জয়ন্ত বর্মনরা বলেন,ছোটনকে নিয়ে আমরা সবাই চিন্তায় ছিলাম। তার মতো উচ্চতার মেয়ে পাওয়া কঠিন। আজ ওদের দেখে মন ভরে যাচ্ছে”— তারা চান ওই দম্পতির পাশে সকলেই দাড়াক।

ভাটপাড়ার মানুষ বলছেন—এই বিয়ে শুধু দুই মানুষের নয়, এটা আশা ও মানবতার জয়। আর ছোটন-নন্দিনী বলছেন—
“ভালোবাসাই আমাদের শক্তি। যদি সরকার একটু পাশে দাঁড়ায়, আমরা দু’জনে আরও ভালোভাবে জীবনটা সাজাতে পারব।”

এই ছোট দম্পতির বড় গল্প আজ আমতলীতে আলো ছড়াচ্ছে—
উচ্চতা নয়, হৃদয়ের গভীরতাই জীবনের আসল মাপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here