ভক্তির জোয়ারে বোল্লা! রীতি মেনে শুরু রক্ষাকালীর মহাপুজো, ঐতিহ্যের মেলায় ঢল নামল লাখো ভক্তের
বালুরঘাট, ৭ নভেম্বর —–ঢাকের শব্দে কেঁপে উঠেছে গ্রাম, প্রদীপের আলোয় ঝলমল করছে মন্দিরচত্বর। রাসপূর্ণিমার পরের শুক্রবার রীতি মেনে শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বোল্লা রক্ষাকালীর মহাপুজো। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরের শান্ত বোল্লা গ্রাম এখন এক জীবন্ত জনসমুদ্র—আলো, ঢাক আর ভক্তির মিশেলে সৃষ্টি হয়েছে অনন্য এক আবহ।
তিনদিন ধরে চলবে এই বর্ণাঢ্য উৎসব। কোচবিহারের রাসমেলার পর উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা হিসেবে খ্যাত বোল্লা রক্ষাকালী মেলা এখন ভক্তির মহাসাগর। দুই দিনাজপুরের পাশাপাশি মালদা, কোচবিহার, শিলিগুড়ি, এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকেও আসে ভক্তর ঢল। কেউ সিঁদুরে মেখে দেবির পায়ে প্রণাম দিচ্ছেন, কেউ বাতাসা ও চিনির পুতুলে সাজাচ্ছেন পুজোর ডালা।
ভক্তদের নিরাপত্তায় মোতায়েন হয়েছে প্রায় দু’হাজার পুলিশকর্মী। মেলাজুড়ে সিসি ক্যামেরা, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প, টহলদারি গাড়ি—নিরাপত্তার জাল যেন মন্দিরের আশীর্বাদের মতোই বিস্তৃত। জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তাল জানিয়েছেন, “ভক্তদের নির্ভয়ে উৎসব উপভোগ করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নজরদারি চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে।”
এই পুজোর ইতিহাস রোমাঞ্চে ভরা। কথিত আছে, এক গ্রামবাসীর স্বপ্নাদেশে পুকুরের জলে মেলে মাতার শিলামূর্তি। তারপর জমিদার মুরারিমোহন চৌধুরীর হাত ধরে শুরু হয় বাৎসরিক পুজো, যা আজও অবিচল ভক্তি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। বর্তমানে সাড়ে সাত হাত উচ্চতার মাতৃমূর্তি সোনা ও হীরের গহনায় সজ্জিত, যার ওজন প্রায় ১৪ কেজি—সমস্তই ভক্তদের অর্পণ।
মেলায় এখন বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার কুইন্টাল বাতাসা, কদমা, চিনির পুতুল। মিষ্টির গন্ধ, ধূপের ধোঁয়া, আর ভক্তদের জয়ধ্বনিতে যেন রাত্রির আকাশও ভিজে উঠেছে মাতৃভক্তির উন্মাদনায়। তবে এই উৎসবের মাঝেই ফের মাথাচাড়া দিয়েছে পশুবলি বিতর্ক। পশুপ্রেমীরা আদালতের দ্বারস্থ হলেও, মন্দির কমিটির দাবি—“আদালতের নির্দেশ মেনেই পুজো সম্পন্ন হবে।”বোল্লা রক্ষাকালী মন্দির কমিটির ম্যানেজার রাজীব কর্মকার বলেন, প্রথা মেনেই দেবী পুজিত হন এই মন্দিরে। প্রতিবছরের মতো এবারেও ভক্তের ঢল নামবে মন্দির প্রাঙ্গনে। আদালতের নির্দেশ মেনেই পুজো হচ্ছে।
চিকিৎসক পয়োধি ধর বলেন, “কত বছরের এই পুজো, কেউ বলতে পারে না। তবে দেবীর ডাকে যে টান, তা প্রজন্ম পেরিয়ে আজও অমলিন।”
ভক্তি, ঐতিহ্য, আর বিশ্বাসে এখন মুগ্ধ বোল্লা। রক্ষাকালীর আশীর্বাদে জেগে উঠেছে উত্তরবঙ্গের ইতিহাস, আর প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ছুঁয়ে চলেছে বোল্লার চিরন্তন মায়া।

















