এক চোখেই দেশকে ছুতে চায় হিলির ন্যাশনাল অ্যাটলেটিক্স চাম্পিয়ন!

0
224

এক চোখেই দেশকে ছুতে চায় হিলির ন্যাশনাল অ্যাটলেটিক্স চাম্পিয়ন! অর্থের অভাবে থমকে শুভজিতের অলিম্পিক স্বপ্ন

বালুরঘাট, ৯ অক্টোবর — এক চোখ অন্ধ, অন্য চোখে ঝাপসা দৃষ্টি। তবু দৌড়ের মাঠে সে যেন বজ্রপাত! হিলির সীমান্ত গ্রামের ভাঙা টিনের ঘর থেকে উঠে আসা এই তরুণের নাম শুভজিত চৌধুরী— বয়স মাত্র উনিশ। কিন্তু এই ছোট্ট বয়সেই তিন-তিনটি ন্যাশনাল মেডেল কাঁধে টেনে নিয়ে এসেছে দেশের মাটিতে দৌড়ের গর্ব। দেশের পতাকা বুকে বইতে চাওয়া তার স্বপ্ন এখন অলিম্পিক মঞ্চে, অথচ একমাত্র বাধা— অর্থের অভাব।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলির রায়নগরের সরু গলির শেষে ছোট্ট হোটেল চালিয়ে সংসার টানেন বাবা সমীর চৌধুরী। ছেলেকে খেলোয়াড় বানানো তাদের জন্য বিলাসিতা। জন্মের পর থেকেই বাঁ চোখ অকেজো। সরকারি নথিতে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শুভজিত। কিন্তু সেই খাতা-কলমের সংখ্যা কখনও তার অটুট জেদের পথে বাধা আনতে পারেনি। এক চোখে দুনিয়া অন্ধকার, তবু হৃদয়ে জ্বলছে স্বপ্নের আলো।

২০২২ সালে শুভজিত শুরু করেছিল দৌড়জীবন। তারপর আর পেছনে তাকায়নি। ২০২৩ সালে দিল্লির খেলা ইন্ডিয়ায় ১৫০০ মিটারে দেশের সেরা প্রতিযোগীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে দৌড়ে চতুর্থ স্থান। ২০২৫ সালে চেন্নাই ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০০০ মিটারে দ্বিতীয় হয়ে দেশে ফিরেছে মেডেল হাতে। রাজ্যস্তরে পদক আর প্রশংসা ভরে তুলেছে ঘরের এক কোণ। কিন্তু সেই ঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে ঝর ঝর করে ঝড়ছে বৃষ্টির জল, আর বলে দিচ্ছে— অর্থকষ্ট এখানেই থেমে নেই।

শুভজিতের কথা, “আমার স্বপ্ন একটাই— দেশের হয়ে দৌড়াব, দেশের পতাকা বুকে বইব। হরিয়ানায় একজন ভালো প্রশিক্ষকের কাছে ট্রেনিং নিতে চাই। কিন্তু খরচ সামলানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। সরকারের সাহায্য ছাড়া থেমে যাব, অথচ থামতে চাই না।”

বাবা সমীর চৌধুরী চোখ মুছে বলেন, “ছোট থেকেই ওর চোখে আলো ছিল না, কিন্তু মনে জেদ ছিল হাজার সূর্যের আলোয় ভরা। এখন শুধু চাই কেউ পাশে দাঁড়াক।”

হিলির বাসিন্দা অমিত চৌধুরী যোগ করেন, “একজন ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হয়েও শুভজিতের সাফল্য আমাদের বিস্মিত করে। এই ছেলেটি হিলির গর্ব, বাংলার সম্ভাবনা। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার যদি ওর পাশে দাঁড়ায়, সে একদিন ভারতের পতাকা নিয়ে ছুটবে বিশ্বমঞ্চে।”

এক চোখে অন্ধকার, বুকভরা আলোক ঝলকানি। সীমান্তের মাটিতে জন্ম নেওয়া এই তরুণ মনে করিয়ে দেয়— দৃষ্টি হারালে স্বপ্ন হারায় না। হিলির প্রতিটি মানুষ এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বলে— “শুভজিত, তোমার দৌড় থামবে না। দেশ তোমার অপেক্ষায় আছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here