লাঠি ধরে অংক শেখানোর পরিণতি! শিক্ষককে জুতো পেটা অভিভাবকদের

0
307

লাঠি ধরে অংক শেখানোর পরিণতি! শিক্ষককে জুতো পেটা অভিভাবকদের, রনক্ষেত্র বুনিয়াদপুরের বড়াইল প্রাথমিক বিদ্যালয়

বালুরঘাট, ৪ আগষ্ট —— খুদেরা অঙ্ক করতে না পারায় নেমে এসেছিল লাঠির ঘা। আর সেই ‘শিক্ষাদান’-এর শাস্তি পড়ল শিক্ষকের ঘাড়েই। বুনিয়াদপুর শহরের বড়াইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের মারধরের অভিযোগে এক শিক্ষককে ঘিরে ধরে জুতোপেটা করলেন অভিভাবকরা। শুধু তাই নয়, ছিঁড়ে ফেলা হল তাঁর জামাকাপড়, হাতে জোড় করেও রেহাই মেলেনি জনরোষ থেকে।

সোমবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো রনক্ষেত্রের পরিবেশ তৈরি হয় দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর শহরের বড়াইল স্কুল চত্বরে। পরে পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষক শুভাশিস বসাককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আপাতত স্কুল বন্ধ। আতঙ্কে অনেক পড়ুয়াই ফিরতে চাইছে না ক্লাসে।

জানা গেছে, বুনিয়াদপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বড়াইল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। পাশ্ববর্তী বড়াইল বানবাসী কল্যাণ আশ্রমের অধিকাংশ খুদে পড়ুয়াই ওই প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র। বর্তমানে যে স্কুলটিতে প্রায় ৫০ জন খুদে পড়ুয়ার পঠনপাঠনের জন্য ওই স্কুলে রয়েছে ৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকা। যে স্কুলের শিক্ষক শুভাশিস বসাককেই এদিন গনপিটুনি দিয়েছেন অভিভাবকেরা। অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার শুভাশিসবাবু অঙ্ক করতে না পারায় একাধিক ছাত্রছাত্রীকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এমনকি যারা অঙ্ক করতে পেরেছে, তারাও রেহাই পায়নি তার হাত থেকে বলেও অভিযোগ। যার জেরে অনেক স্কুল পড়ুয়ার হাঁটাচলায় অসুবিধা দেখা দিয়েছে বলে দাবি অভিভাবকদের।

এদিন সকাল থেকে যাকে কেন্দ্র করে স্কুলে চলে সালিশি সভা। যেখানে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চান ওই শিক্ষক। কিন্তু তাতেও থামে নি অভিভাবকদের ক্ষোভের আগুন। অভিযোগ, এরপরেই আদিবাসী মহিলারা শিক্ষক শুভাশিসবাবুকে ঘিরে ধরে জুতোপেটা করেন, জামা ছিঁড়ে দেন, চলে বেধড়ক মারধর। পাশেই দাঁড়িয়ে বাকরুদ্ধ বাকি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় স্কুল চত্বর। কেউ বলতে পারছে না—এটা স্কুল, না কোনও কোর্টরুম? শেষে খবর পেয়ে ছুটে আসে বংশীহারি থানার বিরাট পুলিশবাহিনী। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে কোনও মতে উদ্ধার করে শুভাশিসবাবুকে থানায় নিয়ে গেলে কিছুটা স্বস্তি ফেরে।

এক খুদে পড়ুয়া সাগর মুর্মু বলেছে, “অঙ্ক পারলেও মেরেছে! না পারলেও মেরেছে!”

পুর্নিমা কিস্কু ও মেনকা বাস্কে নামে দুই অভিভাবক বলেন, লাঠি দিয়ে এমন অমানবিক ভাবে শিশুদের মারবার অধিকার কেউ দেয়নি ওই শিক্ষককে। যারা অংক পেরেছে তাদেরও মারধর করেছে ওই শিক্ষক। ছোট ছোট শিশুদের এমন অমানবিকভাবে মারধর করায় ভয়ে অনেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে স্কুলে আসতে চাইছে না।

প্রধান শিক্ষক পাণ্ডব সরকার বলেন, পড়া নিয়ে শুভাশিস একটু কড়া হয়েছিল বটে, কিন্তু তাই বলে এমন গণপ্রহার! এদিন নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছিল সে। কিন্তু তারপরেও ছাড়ে নি অভিভাবকরা। ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক, শিক্ষকতার গায়ে যেন কালির ছিটে লাগল।

সোমবার দুপুরের এই ঘটনা শুধু এক শিক্ষক বা এক স্কুলের নয়। প্রশ্ন তুলছে গোটা ব্যবস্থার উপর—
শাসন আর হিংসার ফারাক কোথায়? শিক্ষকতা কি নিছকই ক্ষমতার অপব্যবহার? আর প্রতিবাদ কি শুধুই প্রতিহিংসা হয়ে উঠছে? শিশুরা কাঁদছে। শিক্ষক শুয়ে রয়েছেন থানার মেঝেতে। আর শিক্ষা? সে দাঁড়িয়ে আছে দ্বিধায়, অপমানে, নীরবতায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here