চিকিৎসা বন্ধ, খাবার নেই- রোজগার গায়েব!

0
72

চিকিৎসা বন্ধ, খাবার নেই- রোজগার গায়েব! দুই মেয়ে ও অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে অন্ধকারে বুনিয়াদপুরের মহন্ত পরিবার

বালুরঘাট, ৬ জুলাই —- দিনের আলোয় ঢুকে পড়ে ঘরের ত্রিপলের ফাঁক গলে গরম হাওয়া। আর রাত নামলে ছাদের টিন থেকে চুইয়ে পড়ে জলের ফোঁটা। সেই জলে ভেজে ওষুধের পুরোনো কাগজ, ভিজে যায় দুঃস্বপ্নে ভরা একটি গরিবের সংসার।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর শহরের আলিগাড়া ময়াহারে, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক কোণে কাঁপছে একটা ঘর—আর সেই ঘরের প্রতিটি ইট যেন কাঁদছে উত্তম মহন্তের যন্ত্রণায়।

পেশায় এক সময়ের মিষ্টির দোকানের কারিগর। জীবন চলত ঘাম ঝড়া পরিশ্রমে। স্ত্রী অনিতা মহন্ত আর দুই মেয়ে—এদের নিয়েই ছিল ছোট্ট সুখের ঠিকানা। কিন্তু তিন বছর আগেই সেই ঠিকানায় নেমে আসে একে একে মৃত্যু-ছায়া।

স্ত্রী অনিতা আক্রান্ত হন জটিল অসুখে—ইউরিক অ্যাসিডে পা ফুলে ওঠে, কোমরের হাড় ক্ষয়ে গিয়ে হাঁটাচলা বন্ধ। তারপর শরীর ভেদ করে ওঠে রক্তবমি। চিকিৎসায় ধরা পড়ে টিউমার, ক্ষতবিক্ষত খাদ্যনালী। খাবার গিলে রক্ত বমি—এই হয়ে দাঁড়িয়েছে রোজকার চিত্র।

এইমসে কখনও ভরতি হয়েছিলেন সাংসদের সহায়তায়। কিন্তু শেষ ছ’মাস ধরে চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ—কারণ টাকা নেই। ঘরে চাল নেই, আর ওষুধ? এক স্বপ্ন।

উত্তমবাবুর চোখে হতাশার রঙ—“সারা জীবন গায়ে ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেছি। আজ কাজ নেই, পয়সা নেই। স্ত্রীর মুখে রক্ত দেখেও কিছু করতে পারছি না। মেয়ে দুটো কিছু খেতে চাইলে বুকটা যেন ছিঁড়ে যায়।”

দুই মেয়ে স্তব্ধ। ছোট মেয়ে খালি বলে, “মা কিছু খেতে পারে না, আমরা খাব কেন?”
শব্দ যেন ছুরি হয়ে বিঁধে যায় বুকের ভিতর।

এদিকে কুঁচকানো মুখে অনিতা মহন্ত বলছেন, “আমি জানি, সময় বেশি নেই। কিন্তু আমার মেয়েদের পাশে থাকতে চাই। ওরা মায়ের আদর না পেয়ে বড় হলে, কীভাবে বাঁচবে?”

প্রতিবেশী বিপুল সরকার, আলো সরকার ও তাপসী সরকাররা বলেন, “দেখেছি দারিদ্র্য, কিন্তু এ কষ্ট—এ যেন অভিশাপ। প্রশাসনের সাহায্য না এলে এ পরিবার আর দাঁড়াতে পারবে না।”

ত্রিপল আর টিনের ছাউনির তলায় বসে উত্তম মহন্ত এখন শুধু চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকান। হয়তো কোনও আশীর্বাদ ঝরে পড়বে… হয়তো প্রশাসনের কারও কানে পৌঁছাবে তাঁদের নিঃশব্দ কান্না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here