জাল লটারি কাণ্ডে অভিযুক্ত জিয়াকে ধরতে নাজেহাল পুলিশ,কে এই জিয়া খান?পুলিশ জিয়ার স্ত্রীকে জেলা পুলিশ অফিসে লাইনে ক্লোজ করে তদন্তে নেমেছে
বালুরঘাট ৩ জুলাই দক্ষিণ দিনাজপুর : কে এই জিয়া খান?যদি ধরি জিয়া খান একজন সাধারন বাসিন্দা ছিল,তাহলে গঙ্গারামপুর বাসীর মনে এই প্রশ্ন জেগেছে,রাতারাতি কিভাবে কিছুদিনের মধ্যেই সে কোটিপতি হল?তাহলে কি লটারিতে ভাগ্য খুলেছে তার? হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন,তবে বৈধ কোন টিকিট নয়,জাল টিকিট কারবারে রাতারাতি সে কোটিপতি হয়েছে বলে মনে করছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের শহরবাসী।গঙ্গারামপুর শহরের ১৮নম্বর ওয়ার্ডের ধলদীঘি উত্তরপাড়ের বাসিন্দা জিয়াউল খান,ওরফে জিয়া। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গঙ্গারামপুর শহরের মধ্যে জাল টিকিট কারবারে প্রধান ভূমিকার নাম উঠে আসে এই জিয়া খানের।
“কে এই জিয়া খান?”—এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে গঙ্গারামপুরবাসীর মুখে মুখে। একসময় সাধারণ কর্মী পরিচয়ে পরিচিত জিয়া, আজ কোটিপতির আসনে! হঠাৎ করে এই উত্থান স্বাভাবিক নয় বলেই সন্দেহের চোখে দেখছে এলাকাবাসী থেকে শহর এলাকার বাসিন্দারা। সূত্রের খবর,গঙ্গারামপুর শহরের ১৮নম্বর ওয়ার্ডের ধলদীঘি উত্তরপাড়ের বাসিন্দা জিয়াউল খান ওরফে জিয়া,রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন জাল লটারি টিকিট কারবারে যুক্ত থেকে বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
গোপন সূত্রে পুলিশের কাছে খবর আসে,শহরের মধ্যে চলা এই জালিয়াতি চক্রের মূল চক্রী জিয়া খান।তদন্তে নামে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জেলা পুলিশের ডিইবি বিভাগ।কিন্তু অভিযুক্ত এতটাই চতুরভাবে লুকিয়ে পড়েছে যে,তাকে ধরতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ বলে সূত্রে খবর।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিয়ার স্ত্রী গঙ্গারামপুর থানায় হোমগার্ড হিসেবে পুলিশের কাজে বহুদিন ধরেই যুক্ত ছিলেন।জিজ্ঞাসাবাদের জিয়ার নাম জাল লটারি কাণ্ডে জড়ানোর পর তাকে দরখাস্ত করা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের তরফে। সূত্রে খবর,জেলা পুলিশের ডিবি বিভাগের তদন্তকারীরা মনে করছেন,তার স্ত্রীর কাছ থেকেই পাওয়া যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এখন কান পাতলেই গঙ্গারামপুর শহরের আড্ডাস্থল ও চায়ের দোকানে বেশ চর্চায় উঠে আসছে একটি নাম।আট থেকে আশি সকলের মুখে যাচ্ছে জিয়াউল খানের নাম।কে এই জিয়াউল?কেন সে রাতারাতি এত পরিচিত হয়ে উঠেছে।
গঙ্গারামপুর শহরে জাল লটারির কারবার রমরমিয়ে উঠেছিল।ভাগ্য খোলার আশায় জাল লটারি কেটে সর্বশান্ত হতে বসছিলেন সাধারন মানুষ।গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিইবি ও গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ গত ২৫জুন অভিযান চালিয়ে গঙ্গারামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় লাখ জাল লটারি উদ্ধার সহ এক যুবককে আটক করে।তাকে জিঞ্জাসাবাদ করে পুলিশ শহরের ধলদিঘি উত্তরপাড়ায় একটি বাড়িতে হানা দিয়ে পুলক সরকার(২৪),সুমন বেসরা,(২৩) মেহেন্দি হাসান ওরফে ইমন (২২)ও পার্থ চক্রবর্তী (২৪)কে গ্রেপ্তার করে।সেই বাড়ি থেকে পাঁচটি কম্পিউটার এবং একটি টোটো বাজেয়াপ্ত করে।এতে উঠে আসে ধলদিঘির জিয়াউর খানের নাম বলে সূত্রে খবর।গত ২৭জুন বিশাল পুলিশ বাহিনী জ্যোতিবসু রোড়ে জিয়াউলের টোটো শোরুমে তল্লাশি চালায়।পুলিস জিয়াউলের এক সাগরেদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে।এর পরেই ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে জিয়াউল ওরফে জিয়া বলে জানা গিয়েছে।তারপর থেকে গঙ্গারামপুর শহর জুড়ে জিয়াউলের নাম নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
শহরবাসীর মনে প্রশ্ন উঠছে কোন ক্ষমতা বলে জিয়া এতবড় জাল লটারির জাল ছড়িয়েছিল সে? পিছনে কি নেতাদের মত রয়েছে সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শহরজুড়ে। সূত্রের খবর,জিয়াউল খানের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বিবি গঙ্গারামপুর থানার কর্মরত হোমগার্ড পদে যুক্ত ছিলেন পুলিশ কর্মী। তাহলে কী স্ত্রীর দাপটে জাল লটারির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল জিয়া বলে সেই প্রশ্নই তুলেছেন অনেকেই?
জাল টিকিটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে এই জিয়ার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই হরিরামপুর থানার পুলিশ বহু ভুয়ো লটারি টিকিট সহ হরিরামপুর ও উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ এর তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। তাদের কাছ থেকেই একাধিক ডকুমেন্ট, কম্পিউটার ও তার বহু জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গঙ্গারামপুর ও হরিরামপুরের দুই বাসিন্দা জানান,”এই চক্রের কারণে সাধারণ যুবকেরা নিজেদের শেষ সঞ্চয়ও হারিয়েছেন।পুলিশ যেন কঠোর ব্যবস্থা নেয় সেই দাবি জানাই।”
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার গ্রামীণ ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন,”আমরা তদন্ত করছি।জিয়া খানের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে।খুব শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হবে।”
প্রশ্ন উঠেছে জাল লটারির টাকা দিয়ে সম্পত্তি,গাড়ি ও বিলাসবহুল জীবন—সবই যেন ছিল এক প্রতারণার ফাঁদ।এখন দেখার,পুলিশ কবে জালিয়াত চক্রের মূল পান্ডা জিয়াকে পাকড়াও করতে পারে সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সকলেই।