ডাইনি অপবাদে বেধড়ক মার! গুনীনের ‘বাণে’ রক্তাক্ত শুখলাল, নাজিরপুরে আতঙ্কে গৃহবন্দি আদিবাসী পরিবার

0
253

ডাইনি অপবাদে বেধড়ক মার! গুনীনের ‘বাণে’ রক্তাক্ত শুখলাল, নাজিরপুরে আতঙ্কে গৃহবন্দি আদিবাসী পরিবার

বালুরঘাট, ৩০ মে —— বিচার নয়, ছিল শুধুই দণ্ড! আইন নয়, চলে গুনীনের ফতোয়া! মধ্যযুগ যেন ফিরে এল একবিংশ শতকের বাংলা গ্রামে। ডাইনি অপবাদে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার খেতে হল গরিব কৃষিশ্রমিক শুখলাল মার্ডিকে। লাথি, লাঠি, থাবা—কোনকিছুই যেন বাদ গেল না। এখন প্রাণ হাতে নিয়ে গৃহবন্দি তিনি ও তাঁর স্ত্রী লক্ষী সরেন।

ঘটনাস্থল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নাজিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাসলি গ্রাম।
২২ মে, প্রতিদিনের মতোই শুখলাল কাজ করছিলেন দাশুল আদিবাসী পাড়ায়। হঠাৎ এক যুবক তালগাছ থেকে পড়ে যায়। বাড়ির লোক চিকিৎসা নয়, ভরসা করে এক গুনীনের উপর। সেই গুনীন বলেন—“বাণ মেরেছে শুখলাল! ও-ই ডাইন! গ্রামে যত অঘটন হচ্ছে, সবের মূলে ও-ই!”

এই এক বাক্যে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে গাঁয়ের কুসংস্কার। ২৪ মে দুপুরে একদল লোক এসে টেনে নিয়ে যায় শুখলালকে। কোনও কারণ না শুনে, কোনও প্রশ্ন না করে শুরু হয় নির্মম মারধর। কাঁধে লাঠির বাড়ি, পাঁজরে লাথি, মাথায় রক্ত। কান্না নয়, শুখলালের ঠোঁট ফাঁটছিল একটাই কথা বলতে—“আমি কিছু করিনি!”

পরিবার কোনও মতে উদ্ধার করে ভর্তি করে বালুরঘাট হাসপাতালে। চার দিন লড়াইয়ের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। তারপর, পতিরাম থানায় গিয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

তবে তাতেও শেষ হয়নি আতঙ্ক।
আজও গ্রামের বাড়ির দরজা বন্ধ। বাইরে এক কদম পা ফেলা যায় না। কাজ নেই, খাবার নেই, পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। স্ত্রী লক্ষী সরেন ও শুকলাল কিছুটা হতাশার সুরে বলেন,“গরিবের পক্ষে কি বিচার মেলে? ডাইন বললেই সবাই মিলে মারবে? তবে কি সত্যিই রাজ্যে আইন বলে কিছু নেই?”

এই নিয়ে পতিরাম থানার ওসি সৎকার সাংবো জানিয়েছেন “তদন্ত শুরু হয়েছে। শুখলালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শুধু মহাসলি নয়, বাংলার মাটিতে এখনও যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই কুসংস্কারের বিষাক্ত বীজ। যেখানে বিচার করে না আদালত, ফয়সালা দেয় গুনীন। যেখানে গরিব হলে, মুখ বুজেই নিতে হয় ‘ডাইন’ তকমা, আর তারপর গণপ্রহারের শিকার হয়ে পড়ে থাকতে হয় মাঠের পাশে, রক্তে ভেজা মাটিতে।

শুখলাল একা নন। কুসংস্কারের এই কুয়াশা ঘেরা বাংলায়, প্রতিটি চুপ করে থাকা মুখেই লুকিয়ে আছে আরও একেকটা শুখলাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here