“ডাবল ইঞ্জিন না হলে নয়, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে হতাশ বালুরঘাট! অধরা থেকে গেল বিমানবন্দরের স্বপ্ন”

0
258

“ডাবল ইঞ্জিন না হলে নয়, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে হতাশ বালুরঘাট! অধরা থেকে গেল বিমানবন্দরের স্বপ্ন”

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট, ২১ মে —–
যেখানে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন বুনেছিল দক্ষিণ দিনাজপুর, সেখানে এখন শুধুই হতাশার ধুলো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও বালুরঘাট বিমানবন্দর চালু হচ্ছে না— রাজনীতির ফাটলেই চাপা পড়ে যাচ্ছে জেলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা। উত্তরবঙ্গ সফর শেষে বুধবার উত্তরকন্যায় আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য কার্যত জল ঢেলে দিল বহু বছরের স্বপ্নে। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা— “ওগুলো এখন হবে না। সিঙ্গেল ইঞ্জিনে নয়, চাই ডাবল ইঞ্জিন। মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারি না।”

এই এক বাক্যেই ভেঙে চুরমার দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা। এদিনের বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী তথা হরিরামপুরের বিধায়ক বিপ্লব মিত্র এবং জেলার প্রশাসনিক কর্তা-ব্যক্তিরা। যে বৈঠকে মন্ত্রী বালুরঘাট বিমানবন্দর চালুর দাবি জানালে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উত্তরেই কেন্দ্রের ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, “যেকোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সিঙ্গেল ইঞ্জিনে কিছু করা যাবে না।”

যা নিয়ে বিপ্লব মিত্র পরে সাংবাদিকদের বলেন, “সিভিল অ্যাভিয়েশন দফতর পুরোপুরি কেন্দ্রের অধীনে। রাজ্যের তরফে রানওয়ে থেকে টার্মিনাল— সব তৈরি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র না থাকলে বিমান ওঠা-নামা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতেই বোঝা যায় কোথায় জটিলতা।”
তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকারের কাজ শেষ, কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেলেই চালু হবে বিমানবন্দর।”

তবে মুখ্যমন্ত্রীর “সিঙ্গেল ইঞ্জিন নয়” মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, ২০২৬-র বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। প্রশাসনিক বক্তব্যের আবরণে রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট, কেন্দ্র চাইলে তবেই সম্ভব। অথচ আশির দশকে চালু এই বিমানবন্দরটি ছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের গর্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের তৈরি এই ঘাঁটি ভারত-চিন যুদ্ধ ও ১৯৭১-এর লড়াইতেও কৌশলগত কাজে ব্যবহৃত হয়। ২০১৫-১৬ সালে রাজ্য পূর্ত দপ্তর প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকীকরণের কাজ শেষ করে। কিন্তু তারপরও আকাশে ডানা মেলেনি দক্ষিণ দিনাজপুর।

অথচ কদিন আগেও জেলার মানুষের মনে আশা ছিল— মুখ্যমন্ত্রীর সফর থেকেই মিলবে স্বস্তির খবর। এক যুগ ধরে আটকে থাকা প্রকল্পে দেখা দেবে নতুন সূর্যোদয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হালকা অথচ দৃঢ় মন্তব্যেই বোঝা গেল, সেই দিন এখনো অনেক দূরে।

এখন শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দিনাজপুরের আকাশে— “এই ডাবল ইঞ্জিন কবে জোগাড় হবে?” আর তার আগেই কি স্বপ্ন মুছে যাবে কুয়াশায় ঢাকা রানওয়ের মতো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here