সিমকার্ডের আড়ালে আন্তর্জাতিক তথ্য পাচার! বালুরঘাটের বদলপুরে ২২ টি গাড়ির কনভয় নিয়ে সিবিআইয়ের হানা। পলাতক অভিযুক্তরা
বালুরঘাট, ১০ মে —– জমি নয়, জমি থেকে উঠে আসা তথ্য! আধার ফিঙ্গারপ্রিন্টের জাল বুনে দেশের গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে শনিবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরাম থানার অন্তর্গত বদলপুর গ্রামে হানা দিল সিবিআই। নজিরবিহীন এই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ১২ জন সিবিআই আধিকারিক এবং তাদের সুরক্ষায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। সঙ্গী ছিল ২২টি গাড়ির বহর। সারা গ্রামে রীতিমতো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি।
যে ঘটনার কেন্দ্রে এক নাম— বিট্টু দাস। গ্রামের ছেলে, কিন্তু কার্যকলাপে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সঙ্গে সোজাসুজি যোগাযোগ। অভিযোগ, বেসরকারি টেলিকম সংস্থার নাম ভাঙিয়ে গ্রাহকদের আধার ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করত বিট্টু। সেখান থেকেই শুরু তার ‘ডিজিটাল অপরাধ সাম্রাজ্য’। আধার নম্বর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট জোগাড় করে তৈরি করত ভুয়ো সিমকার্ড। যার সঙ্গী হিসেবে নিরবিচ্ছিন্ন হিসেবে কাজ চালাত দেবাশিষ দাস ও হৃদয় দাস সহ মোট পাঁচ জনের টিম।
সিবিআই সূত্রে খবর, এই ভুয়ো সিম বিক্রি হত চড়াদামে প্রতারক চক্রের কাছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, পাচার হত বিদেশেও। শুধু প্রতারণা নয়, দেশের নিরাপত্তা, সামরিক তথ্য, আর্থিক লেনদেন— সব কিছুই সম্ভব হত এই ‘ফাঁকা পরিচয়ের’ মাধ্যমে। যা মূলত এক প্রকার ‘ডিজিটাল অস্ত্র’।
মুলত বেশ কয়েকমাস আগে ভুয়ো সিম কার্ড কাণ্ডে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের রামপুর ও বংশীহারির জামার এলাকার বিদ্যুৎ মেহেরা (২৬) মাহাফুজ আলাম (৩৩) ও অপুর্ব তালুকদার (৩০) নানে তিন কুখ্যাত প্রতারককে গ্রেফতার করে পুলিশ। যে তদন্তে উঠে আসে বিট্টুর নাম। পুলিশের দাবি, বিট্টু এক বেসরকারি টেলিকম সংস্থায় কাজের সুযোগ নিয়ে গ্রাহকদের আধার কার্ড ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করত। তারপর সেগুলি ব্যবহার করে বেআইনি সিমকার্ড সংগ্রহ করতেন। যে সিমকার্ড গুলি বিভিন রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ ও বিদেশে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত তারা। যে চক্রে বিট্টুর সাথে যুক্ত ছিল দেবাশিষ দাস, হৃদয় দাস সহ মোট ৫ জনের একটি টিম। আর যার জেরে অল্পদিনের মধ্যে ফুলে ফেঁপে ওঠেন বিট্টু সহ তার শাগরেদরাও। তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা দেখে গ্রামের অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। দামি ফোন, নিত্য নতুন বাইক, দেদার খরচ— অথচ তাদের আয়ের উৎস ছিল রহস্যজনক। সিবি আয়ের আধিকারিকরা মনে করছেন, বিট্টু ও তার টিম এসব সিমকার্ড বাইরে মোটা টাকায় বিক্রি করে দেশের তথ্য বিক্রি করছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন ১২ জন সিবি আই আধিকারিকদের এমন গোপন অভিযান বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে ঘটনার খবর পেতেই বাড়ি ছেড়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে অভিযুক্তরা সকলেই।
বিট্টু দাসের আশি উর্দ্ধ দিদা বিছুয়া দাস বলেন, আমি অসুস্থ। বাড়িতে কেউ নেই। প্রচুর পুলিশ বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র উলোটপালট করেছে। আমি এসবের কিছুই জানি না।
স্থানীয় বোল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গৌরি বর্মন বলেন, পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন সিবিআই আধিকারিকরা তার এলাকায় ঢুকেছিলেন। বেশ কিছু বাড়ি তল্লাশি চালাবার পাশাপাশি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা ডলি কেরকাট্টাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এমন ঘটনায় তারাও যথেষ্ট অবাক হয়েছেন।
ডিএসপি সদর বিক্রম প্রসাদ জানিয়েছেন, বদলপুরের বাসিন্দা বিট্টু দাসের বাড়িতেই এসেছিল সিবিআই আধিকারিকরা। তবে পুলিশকে এ ব্যাপারে তারা কিছু জানায়নি।