১২লক্ষে প্রাথমিকে চাকরির টোপ,চাকরিপ্রার্থীকে খুনের চেষ্টা! চার বছরেও অধরা তৃণমূলের শিক্ষক ও যুব নেতা গোপেন, ভাইরাল ফেসবুক পোস্ট
বালুরঘাট, ৮মে ——- প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলাবাজি করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীর উপর খুনের চেষ্টা করারও। আর সেই অভিযোগে নাম জড়াল এক যুব তৃণমূল নেতা ও শিক্ষক নেতার। তোলাবাজি, প্রতারণা, এমনকি খুনের চেষ্টার মতো জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হলেও, ঘটনার চার বছর পেরিয়েও এখনও অধরা অভিযুক্ত। ভাইরাল ফেসবুক পোস্ট ঘিরে ফের উত্তাল দক্ষিণ দিনাজপুর। শুধু প্রাইমারী নয়, হেড শিক্ষকের পোস্টও বিক্রি করেছে ওইসব যুব ও শিক্ষক নেতা, অভিযোগ বিরোধীদের। অভিযোগ অস্বীকার অভিযুক্তের,তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালে।গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা ডিএলএড পাস বেকার যুবক যুধিষ্ঠির হালদারের অভিযোগ ,প্রাথমিকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৯লক্ষ টাকা ধাপে ধাপে নিয়েছিলেন বংশীহারির সুকান্তনগরের বাসিন্দা,শিক্ষক ও যুব তৃণমূল নেতা গোপেন সরকার।দাবি ছিল ১২লক্ষ টাকার।যুধিষ্ঠির জানাচ্ছেন, অভাবের সংসারে ধারদেনা করে প্রথমে সাত লক্ষ টাকা দেন তিনি।বাকি টাকা না দিতে পারায় তাঁর মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড-সহ সমস্ত অরিজিনাল নথিপত্র আটকে রাখেন গোপেন বলে অভিযোগ তার।পরে আরও দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিছু কাগজ ফেরত পান তিনি।কিন্তু শেষ তিন লক্ষ না দেওয়ায় গঙ্গারামপুরের মিশনমোড় থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেন গোপেনের নামে।শুধু তাই নয়, প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টাও করা হয় তাঁর উপর।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১সালেই গঙ্গারামপুর থানায় গোপেন সরকারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়।যে ঘটনা আদালতের বিচারকের সামনে পাঁচজন সাক্ষী জবানবন্দী দিয়েছেন গোপেনের বিরুদ্ধে এই বিষয়টি জানিয়ে।ঘটনার চার বছর পেরিয়ে গেছে, চারজন তদন্তকারী সাব ইন্সপেক্টর ওই যুব নেতার মামলার তদন্তে পাল্টে গেলেও এখনও অধরা অভিযুক্ত।
যুধিষ্ঠিরের অভিযোগ”অভিযুক্তের রাজনৈতিক প্রভাবই পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণ। টাকা ফেরতের জন্য এবার উচ্চ আদালতে যাব।”
সম্প্রতি ‘ব্যাক পলিটিক্স টু’ নামে একটি ফেসবুক পেজে গোপেন সরকারের ছবি ও এফআইআরের নথি সহ বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে আসে।এরপরই রাজনৈতিক মহলে ফের শুরু হয় তোলপাড়। সিপিএম, বিজেপি-সহ বিরোধীরা গোপেনের অবিলম্বে গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছে।
সিপিএম নেতা মোশাদ্দেক হোসেনের হুঁশিয়ারি,“চাকরি বিক্রির দোকানদারদের গ্রেফতার না হলে বাড়ি ঘেরাও হবে।”
বিজেপির দীপেশ বসাকের অভিযোগ, “প্রাইমারি নয়, হেড টিচার পোস্টও বিক্রি হয়েছে!অভিযুক্তের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল বলেন, “পুলিশে অভিযোগ হলে আমরাও কড়া পদক্ষেপ চাইবো অভিযুক্ত নামে।”
গোপেন সরকার অবশ্য জানিয়েছেন,”তিনি প্রশাসনিক তদন্তকে স্বাগত জানান এবং দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি মেনে নেবেন”।
গঙ্গারামপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপায়ন ভট্টাচার্যজানিয়েছেন,”বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা না হবে।”
চাকরির বাজার যখন অন্ধকার,তখন দুর্নীতির এমন অভিযোগে আবার একবার প্রশ্নের মুখে শাসকদলের নৈতিকতা।উত্তরের অপেক্ষায় দক্ষিণ দিনাজপুরবাসী।
তবে প্রশ্ন উঠছে— এ রাজ্যে কি রাজনৈতিক ছাতার নিচে আইনের শাসনও মাথা নিচু করছে? সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন একটাই হুঁশিয়ারি: “প্যান্ট খোলা ধরলে কিনারা পাবে না।” আগামী দিনে কী ফাঁস হবে— উদ্বেগে রাতের ঘুম উড়েছে অনেকেরই।