সীমান্ত অধ্যুষিত বালুরঘাটেও নারী পাচার নিয়ে উদ্বেগ! রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ একই পরিবারের দুই মেয়ে। অপহরণের অভিযোগ পরিবারের
বালুরঘাট, ৫ মে ——- সীমান্ত এলাকায় নারী পাচার নিয়ে উদ্বেগ! রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ একই পরিবারের দুই মেয়ে। বান্ধবীর বাড়ি যাবার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েই নিখোঁজ হয় দুই বোন। অপহরণের অভিযোগ তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েছে অসহায় পরিবারের সদস্যরা। আসছে একাধিক হুমকি ফোনও। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি বালুরঘাটের বড় মালঞ্চা এলাকার। ঘটনার পরেই পায়েল সরকার নামে এক মহিলার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে বালুরঘাট থানার দ্বারস্থ হয়েছেন অসহায় মা বন্দনা দাস। কিন্তু খোঁজ মেলেনি বড় মালঞ্চার রত্না ও তাঁর ছোট বোনের। ঘটনাযকে ঘিরে যথেষ্টই আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।
বালুরঘাটের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় মালঞ্চা এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর উত্তম দাসের এক নাবালিকা সহ দুই মেয়ে রবিবার সন্ধ্যে থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। বড় মেয়ে রত্না দাস মালঞ্চা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী, ছোট মেয়েও ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। যাদের রহস্যজনকভাবে গায়েব হবার ঘটনা নিয়ে সোমবার পেশায় বিড়ি শ্রমিক মা বন্দনা দাস স্থানীয় বালুরঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগ, দুই মেয়ের সাথে পাশ্ববর্তী একটি গ্রামের মেয়ে পায়েল সরকারের সাথে বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যার বিরুদ্ধে মেয়েদের ফুসলিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সহ একাধিক অভিযোগের কথা এর আগে শুনেছেন বলে অভিযোগ তার। আর এরপরেই পায়েলের সাথে তাদের মেলামেশা বন্ধ করতে মেয়েদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়েরা সেই সম্পর্ক চালিয়ে যায়। শুক্রবার ও শনিবার এই নিয়েই মা-মেয়েদের মধ্যে তুমুল বচসা ও শাসন চলে। তার ঠিক পরদিনই নিখোঁজ হয়ে যায় দুই বোন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাদের না পেয়ে সোমবার ঘটনা জানিয়ে বালুরঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা বন্দনা দাস, পেশায় বিড়ি শ্রমিক। কাঁপা গলায় জানালেন, “ওরা বেরিয়েছিল পাশের গ্রামের পায়েল সরকারের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে। তারপর থেকেই নিখোঁজ। কোথায় গেল, কে নিয়ে গেল, কিচ্ছু জানি না। শুধু একটা একটা করে হুমকির ফোন আসছে।”
অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন কেবল একটাই বার্তা দিয়ে যায়—“পুলিশে গেলে ফল ভালো হবে না।” আতঙ্কে কাঁটা পুরো পরিবার। বৃদ্ধ দাদু অনিল মণ্ডল কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার নাতনিদের যেন কিছু না হয়, ওদের খুঁজে আনুক কেউ!”
পরিবারের আত্মীয় শুভ দাস বলেন, “আমরা মনে করছি এটা শুধুই নিখোঁজ নয়। কোনও পাচারচক্র ওদের ফাঁদে ফেলেছে।”
এই জল্পনাকে উসকে দিচ্ছে অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবস্থানও। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় নারী ও শিশু পাচারের নজির নতুন কিছু নয়। আর এবার একসঙ্গে একই পরিবারের দুই মেয়ের গায়েব হওয়ায় উদ্বেগ আরও গভীর।
জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল জানিয়েছেন, “লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”