ভাত নেই হাঁড়িতে, ছাদের ফাঁকে চাঁদ!

0
135

ভাত নেই হাঁড়িতে, ছাদের ফাঁকে চাঁদ! অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটছে আস্ত পরিবারের। মোহনা পঞ্চায়েতের উদাসীনতায় ক্ষোভে ফুসছে গ্রাম

বালুরঘাট, ৩ মে ——- বাড়ির ছাদে পলিথিন টাঙানো, চালার কোণায় জমে থাকা বৃষ্টির জল, ভাঙা খুপরি ঘরের এককোণে পড়ে রয়েছেন একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ। পাশে বসে হাত দিয়ে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে একটি ছোট মেয়ে। বয়স? মেরেকেটে দশ। নাম মর্জিনা।
এই দৃশ্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের মোহনা পঞ্চায়েতের গয়েশপুর গ্রামের। সরকারি নথিতে ‘গ্রামীণ উন্নয়ন’ আর ‘সামাজিক সুরক্ষা’র যে সব শব্দ জ্বলজ্বল করে, বাস্তবের পাতায় তা যেন নিছক কালি।

মর্জিনার বাবা মকসেদুল মন্ডল, বয়স ৬৩। হাটে হাটে ঘুরে ছাতা সারিয়ে দিন কাটাতেন। এক বছর আগে রেশন আনতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়ে শারীরিকভাবে অচল হয়ে পড়েছেন। স্ত্রী রেজেকা বিবি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বহু আগেই। মাঝেমধ্যে বাড়ি ছেড়ে কোথাও হারিয়ে যান, আবার কোনদিন ফিরবেন, কেউ জানে না।

এই চরম ভাঙনের সংসারে দুই শিশুই এখন শেষ আশ্রয়। রেজাউল (১১) এক মাদ্রাসায় পড়ে, যেখানে অন্তত দুবেলা খাবার জোটে। আর ছোট মর্জিনা গোপালগঞ্জ রঘুনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। মেয়ে বলে হয়তো আরও একটু তাড়াতাড়িই বড় হতে হয়েছে। স্কুল খোলা থাকলে মিড-ডে মিলের ভাত কৌটোয় ভরে বাবাকে খাইয়ে তবেই খায় নিজে। স্কুল বন্ধ থাকলে কেউ না দিলে, খাওয়া জোটে না।

ছোট্ট মর্জিনা বলেন, স্কুল খোলা থাকলে খাবার নিয়ে এসে বাবাকে খাইয়ে সে খায়। স্কুল বন্ধ থাকলে না খেয়ে থাকতে হয়।

বৃদ্ধ মকসেদুল মন্ডল বলেন, রেশন আনতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই কার্যত ঘরবন্দি। কোন কাজ করতে পারেন না তিনি। প্রতিবেশীরা খাবার দিলেই তার ভাগ্যে খাবার জোটে। রেশন ছাড়া অন্য কোন সরকারি সাহায্যে তার ভাগ্যে জোটেনি।

প্রতিবেশী বিজয় রায় বলেন, “দেখলেই বোঝা যায়, কতটা খারাপ অবস্থা। ঘরটা যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। আমরা না থাকলে তো ওরা অভুক্তই থেকে যেত।”

ঘটনার কথা জানেন না বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান সুনীল সরকার। এলাকাবাসীর বক্তব্য, তাঁকেই তো একাধিকবার জানানো হয়েছিল। বিধায়কের দিকেও সাহায্যের আর্তি গেছে বহুবার, কিন্তু কোনও উত্তর নেই।

একজন বৃদ্ধ, এক মানসিকভাবে অক্ষম মা, আর দুটি শিশু—চারজনের অস্তিত্ব যেন আজ ঝুলছে সরকারের অন্ধ চোখ আর নিষ্পৃহ কানের দড়িতে।

এই পরিবারটির করুণ দশা শুধু একক কাহিনি নয়, বরং প্রশ্ন তোলে গোটা ব্যবস্থার উপর—মানুষ কোথায় গেলে দৃশ্যমান হয় রাষ্ট্রের চোখে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here