কাশ্মীরের রক্তাক্ত পেহেলগাঁওয়ে আটকে বালুরঘাটের নবদম্পতি! আতঙ্কে কাঁদছেন বৃদ্ধ বাবা-মা, প্রার্থনায় পাড়ার মানুষ
বালুরঘাট, ২৩ এপ্রিল —— কাশ্মীরের রক্তঝরা উপত্যকায় টান টান উৎকণ্ঠার মধ্যে আটকে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি। মঙ্গলবার পেহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ গেছে একাধিক নিরীহ মানুষের। আর সেই সময়ই এলাকাতেই ছিলেন বালুরঘাটের রবীন্দ্রনগরের অনুরাগ মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী দীপান্বিতা দে। ঘটনায় স্তব্ধ পরিবার, বাকরুদ্ধ পাড়া, কেঁদে আকুল অনুরাগের মা মিনতি মণ্ডল—প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর করুন প্রার্থনা, ‘‘আমার ছেলেটা আর বউমাকে ফিরিয়ে দিন, ওরা যেন শুধু বাড়ি ফিরে আসে!’’
পেশায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার অনুরাগের সঙ্গে দীপান্বিতার বিয়ে হয়েছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। ১৬ এপ্রিল তাঁরা বেড়াতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। পর্যটন স্বপ্ন ভেঙে এক লহমায় তা রূপ নেয় মৃত্যুভয়ের বিভীষিকায়। অনুরাগ টেলিফোনে জানান, মঙ্গলবার সকালবেলায় ঘুরতে বেরোতেই স্থানীয়রা সতর্ক করেন তাঁকে, ‘‘সামনে গোলাগুলি চলছে, হোটেলে ফিরে যান।’’
সে সময় বেঁচে ফিরে হোটেলে আশ্রয় নেন তাঁরা। আজ সেনা বাহিনীর সহযোগিতায় তাঁদের শ্রীনগরে স্থানান্তরের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনুরাগ।
তবে পরিবারের বুকে ততক্ষণে ঝড়। ‘‘ফোনে ছেলের গলা শুনেছি, কিন্তু কেমন আছে, কোথায় আছে—সবসময় ভাবনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে,’’ কাঁদতে কাঁদতে বললেন অনুরাগের মা। অনুরাগের বাবা মৃণাল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “শুধু আমার ছেলে নয়, যাঁরা ওখানে আটকে, তাঁরা যেন সকলে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন, এটাই সরকারে কাছে আমাদের অনুরোধ।”
রবীন্দ্রনগরের ছোট্ট গলিতে এখন নীরবতা আর প্রার্থনার সুর। প্রতিবেশীরা বলছেন, “ওদের হাসিমুখে বিয়ের পর বিদায় দিয়েছিলাম, এখন যেন ফেরত আসে সেই মুখ।”
নির্বাক দক্ষিণ দিনাজপুর দেখছে, ভ্রমণ কত সহজেই রূপ নিতে পারে বিভীষিকায়। আর এক মা আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছেন—‘‘মা দুর্গা, আমার সন্তানদের বাঁচিয়ে দাও।’’