২০১৮ সালের পুনরাবৃত্তি! গণনা কেন্দ্রে কারচুপি রুখতে মধ্যরাতে বালুরঘাটে ধর্নায় বসলো সুকান্ত। নাটক বলল তৃণমূল।

0
319

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১২ জুলাই ——- হেরে যাওয়া প্রার্থীদের জেতানোর চেষ্টা! ২০১৮ এর পুনরাবৃত্তি রুখতে মধ্যরাতে গণনা কেন্দ্রের সামনে ধর্নায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। শুধু তাই নয়, জেলাপরিষদের দখল নিতে শাসকদল আশ্রিত দুস্কৃতিদের গণনাকেন্দ্রের ভেতরে ঢোকানোর অভিযোগও তুলেছেন সুকান্ত।  মঙ্গলবার গভীররাতে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় বালুরঘাট কলেজে অবস্থিত ভোট গণনা কেন্দ্রে। দুস্কৃতিদের বাইরে বের করবার দাবিতে কলেজ গেটের সামনে বসে পড়তেও দেখা গেছে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে। যেখানেই তিনি অভিযোগ করেন, গণনায় কারচুপি করিয়ে দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে ভুয়ো পরিচয়পত্র দিয়ে শহরের সমাজবিরোধীদের গণনাকেন্দ্রে ঢুকিয়েছে শাসকদল। যদিও পুলিশ সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে এদিন গণনাকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এদিকে বিজেপির তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে তৃণমূল। তাদের দাবি নির্বাচনে ২১ টি গোল খেয়ে ভুল বকছেন সুকান্ত বাবু। 

 মঙ্গলবার ভোট গণনার শুরু থেকেই নিজের সংসদীয় ক্ষেত্রে ধরাশায়ী হতে থাকেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বালুরঘাটের একাধিক জেতা গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয় বিজেপির। সীমান্ত লাগোয়া চিঙ্গিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতটি বিজেপি দখল করলেও হাতছাড়া হওয়ার তালিকা অনেকটাই বড়। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের দখলে থাকা ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির ভালো ফলাফল লক্ষ্য করা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা অমীমাংসিতর জায়গায় পৌঁছায়। যাকে ঘিরেই ওইদিন সন্ধ্যে থেকে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সুকান্তর নেতৃত্বে ঘেরাও করা হয় জেলাশাসকের অফিসও। বিজেপির অভিযোগ, তাদের দলীয় প্রার্থীরা জিতবার পরেও জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। শুধু তাই নয়, জিতবার পরে শংসাপত্র দিতেও গড়িমসি করছেন বিডিও। এখানেই শেষ নয়, অমীমাংসিত ওই পঞ্চায়েতে আচমকা তৃণমূল কে এগিয়ে দেবার অভিযোগও তোলেন সুকান্ত। যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত অভিযোগও করেন সুকান্ত। এরপর রাত বাড়তেই ফের জটিলতা তৈরি হয় বালুরঘাট কলেজের ভোট গণনা কেন্দ্রে। যা নিয়েই ওইদিন মধ্যরাতে কলেজ গেটের সামনে হাজির হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ। তার অভিযোগ পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড়ানো কোন এক মহিলা নেত্রী ভোটে হেরে যাবার পরেও তাকে জোর করে জেতানোর চেষ্টা হচ্ছে গণনা কেন্দ্রের ভেতরে। শুধু তাই নয়, শহরের বেশকিছু সমাজবিরোধীদের ভুয়ো আইকার্ড বানিয়ে গণনা কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকিয়ে জেলাপরিষদ প্রার্থীদের জোর করে জেতানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল। যা নিয়েই এদিন মধ্যরাতে কলেজ গেটের সামনে ধর্ণায় বসেন সুকান্ত। অভিযোগ জানানো হয় নির্বাচন কমিশনকেও। প্রায় ভোররাত অবধি চলা এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় বালুরঘাট শহরে।  যা নিয়েই অনেকে ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘটনাকেই উস্কেছেন। কেননা ওইদিনও বালুরঘাট কলেজের এই ভোট গণনা কেন্দ্রেই মধ্যরাতে দুস্কৃতিদের তান্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। শুন্যে গুলি চালিয়ে গণনা কেন্দ্রে দেদার ছাপ্পা দেবার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যাদের নেতৃত্ব দেবার অভিযোগও উঠেছিল তৃণমূলের ততকালীন সাংসদ অর্পিতা ঘোষের বিরুদ্ধে। যদিও এদিন রাতের ওই ঘটনা ২০১৮ সালের থেকে কিছুটা আধুনিকীকরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। 

সুকান্ত মজুমদার বলেন, হেরে যাওয়া প্রার্থীদের রাতের অন্ধকারে জেতানোর চেষ্টা করা হচ্ছে গণনা কেন্দ্রে। একইসাথে ভুয়ো আইকার্ড দিয়ে শহরের কিছু সমাজবিরোধীদের গণনা কেন্দ্রে ঢুকিয়ে তাদের লোকজনকে ভয় দেখিয়ে বের করে দিয়ে তৃণমূল তাদের প্রার্থীদের জেতাচ্ছে। যা ২০১৮ এর গণনাকেন্দ্রে ছাপ্পার আধুনিকীকরণ। 

বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মীরা বলেন, তাদের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে গণনা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছুই বলছে না।

এদিকে সুকান্তর এই অভিযোগ কে পুরোপুরি নাটক বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন থেকে সুকান্ত বাবু যা করেছেন তা নাটকের বাস্তব জগতকেও হার মানিয়েছে। 

প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন সুকান্ত বাবু। নিজের এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২১ টি গোল খেয়ে ভুল বকা শুরু করেছেন তিনি।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here