আত্রেয়ীর জল সঙ্কট নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মমতা, ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে বালুরঘাটে দু’ মিটার উচু বাধ নির্মান করে সমস্যা সমাধানের দিশা মুখ্যমন্ত্রীর।
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৭ ডিসেম্বর—আত্রেয়ীর উপর বাংলাদেশে রাবার ড্যামের কারণে দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকদের জল সমস্যার চরম দুর্ভোগ নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে রায়গঞ্জে এসে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কৃষক ও মৎসজীবিদের সমস্যার দিশা দেখান খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েক বছর আগে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের মোহনপুরা এলাকায় বাংলাদেশ সরকার অন্যায়ভাবে আত্রেয়ীতে নদীবাঁধ দেয়। যে কারণে জল না পেয়ে এ জেলার আত্রেয়ী নদীর দুপাড়ের কৃষকরা বর্ষার সময় বাদে সারাবছরই তীব্র জলসংকটে ভোগেন। যা নিয়ে কয়েকবছর আগে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদনও করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও বাংলাদেশের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় উদাসীনতা ও জেলার প্রতি বঞ্চনার কারণেই এ জেলার আত্রেয়ী নদীর দুপাড়ের প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকার কৃষকরা সারাবছর জলসংকটে ভুগছেন। এমনকি রাজ্য সরকারের নদী থেকে জল উত্তোলন (আরএলআই) প্রকল্পও জলের সমস্যার কারণে অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে নদীর দুপাশের কয়েক হাজার বিঘা জমিতে কেবলমাত্র বর্ষার সময়েই চাষাবাদ চলছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে জেলা শাসক আয়েশা রাণী এ জানান, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের জলসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর ও সেচ দপ্তরের তরফে পরিদর্শনের পরে বালুরঘাট সংলগ্ন চকভবানী এলাকায় একটি বাঁধ নির্মানের জন্য ৩১ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরী করা হয়েছে। যা এদিন মুখ্যমন্ত্রী শিলান্যাস করেন। আগামী দু বছরের মধ্যেই সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। সেচ দপ্তরের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে বালুরঘাট শহরের ওই এলাকায় প্রায় দু মিটার উঁচু বাঁধ নির্মান করা হবে। এরফলে আত্রেয়ী নদীতে সারা বছর প্রায় ১০ কিলোমিটার নদীপথে জল ধরে রাখা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বালুরঘাট ও তপন ব্লকের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কাশিয়া খাঁড়িকে সংস্কার করা হচ্ছে বলে এদিন জেলা শাসক জানিয়েছেন। জাতীয় গ্রামীন কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্পের মাধ্যমেই এই খাঁড়ির সংস্কার করা হবে। যা শেষ হলেই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকরা চাষাবাদে উপকৃত হবেন বলেও জেলা শাসক জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকবছর ধরেই বাংলাদেশের মোহনপুরা এলাকায় রাবার ড্যাম করার প্রতিবাদে জেলার একাধিক সংগঠনের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও গর্জে উঠেছিলেন। জেলার একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের লাগাতার আন্দোলনের সময় ওয়াটার ম্যান অব ইন্ডিয়া রাজেন্দ্র সিং ও মেধা পাটেকার বালুরঘাটে এসেছিলেন। নদীকে নিয়ে বালুরঘাটে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়েছিল। এসব লাগাতার আন্দোলনের পর এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই নদীবাঁধ তৈরীর শিলান্যাসের পরেই খুশির হাওয়া জেলার এই এলাকার কৃষকদের মধ্যে। তাদের আশা, খুব শিঘ্রই তারা জলের সমস্যা কাটিয়ে ফের আগের মতো সারা বছর আত্রেয়ীর জলে চাষাবাদ করতে পারবেন।
বিপুল হালদার নামে আত্রেয়ীর পাড়ের এক বাসিন্দা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে তারা ধন্যবাদ জানান এমন একটি কাজের উদ্যোগ নেবার জন্য। কেননা দীর্ঘদিন ধরে এইসব এলাকার মানুষেরা সমস্যায় ভুগছিলেন।
উৎসাহ নামে বালুরঘাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক সরোজ কুন্ডু বলেন, কৃষক ও মৎস্যজীবিদের এই সমস্যা উপলব্ধি করেই তারা জেলায় ওয়াটারম্যানকে নিয়ে এসে তা পরিদর্শন করিয়ে একটি সেমিনার করিয়েছিলেন। যারপরে তার নির্দেশে তাদের সংগঠনের তরফে একাধিক জায়গায় এব্যাপারে লিখিতভাবে জানানো হয়। আর তারপরে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ যথেষ্টই প্রশংসনীয়।