সোনাহীন বুড়া কালী! বালুরঘাটে গয়না বিতর্কে শোরগোল—এই প্রথম গয়নাহীন পূজা!
নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট
চৈত্র সংক্রান্তির বিশেষ দিনে পুজো হল, হল ভক্তির উচ্ছ্বাস, কিন্তু মায়ের গায়ে রইল না সোনার ঝলক। তিন শতকের বেশি পুরনো ঐতিহ্যকে পিছনে ফেলে এই প্রথমবার সোনার গয়না ছাড়াই সম্পন্ন হল বালুরঘাটের বুড়া কালীর আরাধনা। আর এই অলংকারবিহীন পূজো ঘিরেই শহরজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে ঐতিহ্যবাহী বুড়া কালীবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ পূজা। প্রতিবছরের মতো এবারও মা শীতলা, বুড়া কালী ও মশান কালীর আরাধনায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা মন্দির প্রাঙ্গণ। ঢাকের বাদ্যি, উলুধ্বনি আর পুজোর গন্ধে যখন চারদিক মুখর, তখনই নজরে পড়ে—মা সেজে উঠলেও মায়ের গায়ে নেই সেই চিরচেনা সোনার গয়না।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই চৈত্র সংক্রান্তিতে মায়ের পুজোয় ব্যবহৃত হয়ে আসছে কয়েক ভরি সোনার গয়না। সেগুলি সুরক্ষিত থাকে স্থানীয় ব্যাংকের লকারে। কিন্তু এবছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মন্দির কমিটির সম্পাদক। তিনি ভর্তি হন হাসপাতালে। লকারের চাবিও ছিল তাঁর কাছেই। সঙ্গে ছিলো ব্যাংকের ছুটির দিন। ফলে গয়না উদ্ধার করে মায়ের পুজোয় ব্যবহার করার আর সুযোগই মেলেনি।
মন্দির কমিটির সদস্য অমিত মহন্ত জানিয়েছেন, ‘‘আমরাও ভাবতে পারিনি এমনটা হবে। প্রতি বছর মা সোনার গহনা পরে পূজিত হন, এটাই নিয়ম। কিন্তু সম্পাদক অসুস্থ হওয়ায় কিছুই করা যায়নি। মায়ের প্রতি ভক্তি ও নিষ্ঠায় আমরা বিন্দুমাত্র ঘাটতি রাখিনি।’’
কমিটির আর এক সদস্য রঞ্জিতা সাহার কথায়, ‘‘আমরা খুব মর্মাহত। তবে মা কি শুধু সোনার গয়নাতেই বন্দি? আমাদের প্রার্থনা, আনুষ্ঠানিকতা, আস্থা—সব কিছু দিয়েই মাকে সাজিয়েছি।’’
তবে শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, এত বড় একটি ধর্মীয় আয়োজনে কেন বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি? কেউ কেউ বলছেন, “ভক্তির পাশাপাশি প্রস্তুতিতেও যত্ন থাকা উচিত ছিল। সম্পাদক অসুস্থ হলেও তো কমিটিতে অন্য সদস্য রয়েছেন!”
তবে একথা মানতে নারাজ শহরের প্রবীণরা। তাঁদের মতে, ‘‘এমন দৃশ্য কোনওদিন দেখিনি। মা বুড়া কালী গয়না ছাড়া! এটা আমাদের কাছে অপূর্ণতা।’’
অলংকারবিহীন বুড়া কালীর পুজো—এই প্রথম। আর সেই ঘটনাই এখন বালুরঘাটের অলিগলি জুড়ে আলোচনা, তর্ক ও আবেগের কেন্দ্রে।