হার্ডওয়্যার দোকানের আড়ালে মধুচক্র! ঘণ্টায় দু’হাজার টাকার আসর, গণধোলাইয়ের পর পুলিশের জালে ব্যবসায়ী দম্পতি সহ মোট চারজন।উদ্ধার হল একটি গাড়িও
শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট, ২৮ মার্চ ——– বাইরে হার্ডওয়ারের দোকান, ভিতরে দেহ ব্যবসার আসর! কোটিপতি ব্যবসায়ীর বাড়ির অন্দরমহলে চলছিল মধুচক্র, আর বাইরে সাজানো দোকান— যেন নিরীহ ব্যবসায়ীর মুখোশ! কিন্তু সেই মুখোশ খুলে গেল স্থানীয়দের ক্ষোভের ঝড়ে। গণধোলাইয়ের পর পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন ব্যবসায়ী অরুণ দত্ত ওরফে বুড়া,তার স্ত্রী মৌ দত্ত-সহ আরও দু’জন।
গঙ্গারামপুর পৌরসভার ১৮নম্বর ওয়ার্ডের মহামায়া কালী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল এই বেআইনি ব্যবসা। এলাকাবাসীদের অভিযোগ,” সামান্য হার্ডওয়্যার ব্যবসার আড়ালে রাতারাতি অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠেন অরুণ দত্ত।তার বাড়িতে রাত-বিরেতে বাইরের মহিলাদের আনাগোনা, দামি গাড়ি আসা-যাওয়া নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একদল ক্ষুব্ধ বাসিন্দা আচমকাই হানা দেন সেই বাড়িতে। ভেতরে যা দেখেন, তাতে রীতিমতো তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন তাঁরা। ছোট ছোট ঘর তৈরি করে দেহ ব্যবসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। চারদিকে মদের বোতল, দামি খাবারের প্যাকেট, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মহিলাদের পোশাক! সঙ্গে সঙ্গেই অরুণ দত্ত ও তার স্ত্রী মৌ দত্তকে টেনে বের করে গণধোলাই দেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে রঙ ব্যবসায়ী ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লী এলাকার বাসিন্দা অসীত কুণ্ডুকেও পাকড়াও করা হয়, যিনি বাইরে থেকে মহিলাদের সরবরাহ করতেন বলে অভিযোগ। গণধোলাই দিয়ে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।
যে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গঙ্গারামপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়ির ভেতর থেকে প্রচুর বিদেশি মদের বোতল, বিলাসবহুল হোটেলের খাবারের প্যাকেট এবং দেহ ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত মহিলাদের পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ির সামনেও পড়েছিল মদের বোতলের স্তূপ! শুধু তাই নয়, দেহ ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত একটি বিলাসবহুল গাড়িও উদ্ধার করেছে পুলিশ, যার নথি রঙ ব্যবসায়ী অসীত কুণ্ডুর নামে রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ চক্রবর্তী,বুবাই মজুমদার,স্বস্তিকা চক্রবর্তী,তুহিন চক্রবর্তীরা অভিযোগ করে বলেন,””ভাবতেই পারছি না!একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী এত নোংরা পথে টাকা কামাচ্ছিলেন! আমাদের এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।পুলিশ কড়া শাস্তি না দিলে আমরা নিজেদের হাতে ব্যবস্থা নেব। এলাকায় তাদের থাকতে দেওয়া হবে না।”
গঙ্গারামপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান জয়ন্ত দাস বলেন, পুলিশে আস্থা রয়েছে। এলাকায় শান্তি ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।”
গঙ্গারামপুর থানার আইসি শান্তনু মিত্র জানিয়েছেন,”দুই মহিলা সহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।ঘটনার তদন্ত চলছে।এছাড়া ওই এলাকার আরও দুটি বাড়ি আমাদের নজরে রয়েছে।’’
এই ঘটনায় গোটা শহরজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ কেউ চাইছেন, অভিযুক্তদের এলাকা থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হোক।তবেই শহরের পরিবেশ শান্ত হবে।এখন দেখার এই ঘটনার পর পুলিশ আর কী পদক্ষেপ নেয়।
শেষ পাওয়া খবরে গঙ্গারামপুর মহকুম আদালত সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ধৃত চার অভিযুক্তকে নির্দিষ্ট কোন ধারা না দিয়ে সন্দেহের বেশে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জামিনযোগ্য ধরা দিয়ে আদালতে পাঠায়। মওকু আদালতের বিচারক ওই চারজনকে জামিনে মুক্তি দেন। এমন একটি নক্কারজনক ঘটনা নিয়ে গঙ্গারামপুর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে শহরবাসী চরম ক্ষুব্ধ। শহর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ,গ্রামবাসীরা থানায় কোন অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ কেন ধৃত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা কেন করল না।তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভুত সেই প্রশ্ন তুলেই শহরবাসী থানা পুলিশের ভূমিকায় চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন।