ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ শালগ্রামের যুবক! ট্রেনেই বেধড়ক মারধর, খুনের আশঙ্কায় তোলপাড় বালুরঘাট
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৮ জানুয়ারী —–ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়ার পথে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বালুরঘাটের যুবক। মাস পেরিয়ে গেলেও কোনও খোঁজ নেই দক্ষিণ দিনাজপুরের মিত্তুন বর্মনের। পরিবারের দাবি, ট্রেনেই তাঁকে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়েছে! হত্যার আশঙ্কায় চার ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিখোঁজ যুবকের দিদি সাবিত্রী বর্মন। ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বালুরঘাটের অমৃতখন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের শালগ্রাম এলাকায়।
জানা গেছে, শালগ্রামের বাসিন্দা মিত্তুন বর্মন (৩৬) কৃষক গুরুপদ বর্মনের বড় ছেলে। চার বছর ধরে কাজের জন্য একাধিকবার বাইরে গিয়েছেন। এ বারও ৩ রা জানুয়ারি চেন্নাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই তার!
নিখোঁজ যুবকের পরিবারের দাবি, ২০ জানুয়ারি এক গ্রামবাসীর মাধ্যমে পরিবারের হাতে এসে পৌঁছায় একটি ছবি। যেখানে ট্রেনের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় মিত্তুনকে পড়ে থাকতে দেখেছেন তার পরিবারের লোকেরা। যে ছবি দেখেই কিছুটা আঁতকে উঠেছেন তাঁর বাবা-মা ও দিদি। তাঁদের দাবি, ট্রেনের মধ্যেই তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে!
মিত্তুনের দিদি সাবিত্রী বর্মনের অভিযোগ, দেবু সরকার, পুলক মণ্ডল, মুল বর্মন ও নূর নামে চার ঠিকাদারের চক্র তাঁকে ভিনরাজ্যে কাজ দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকে সকলেই দায় এড়িয়ে চললেও ঠিকাদার দেবু স্বীকার করেছেন, “হ্যাঁ, আমি মিত্তুনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে নিয়েছি!” তবে মারধর বা নিখোঁজের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাকি তিনজন।
দিদি সাবিত্রী বর্মন বলেন, “এক মাস ধরে ভাইয়ের কোনও খোঁজ নেই! ও আদৌ বেঁচে আছে? নাকি খুন করে দেহ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে?”
শুধু মিত্তুন নয়, বালুরঘাটের শালগ্রাম এলাকা থেকে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেক যুবক! অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে অন্তত পাঁচ-ছয় জন যুবক এইভাবেই গায়েব হয়ে গেছেন। তাঁদের পরিবার আজও অপেক্ষায় রাস্তা চেয়ে বসে থাকে, যদি কেউ ফিরে আসে!
ছেলের শোকে পাথর বৃদ্ধা মা শচীরানী বর্মন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “অনেক কষ্ট করে বড় করেছি ছেলেকে। পুলিশ ফিরিয়ে দিক আমার ছেলেকে। বাবা গুরুপদ বর্মনও একরাশ হতাশা নিয়ে বলেন, “প্রশাসন কি আমাদের ছেলের হদিশ দেবে না?”
বালুরঘাট সদর ডিএসপি বিক্রম প্রসাদ জানান, “২২ জানুয়ারি আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু ঘটনাটি ট্রেনে ঘটেছে, তাই তদন্তের জন্য জিআরপি-র কাছে পাঠানো হয়েছে।”
কিন্তু প্রশ্ন একটাই— মিত্তুন কি কোনওদিন ফিরে আসবেন? নাকি তিনি যোগ হলেন শালগ্রামের নিখোঁজ যুবকদের তালিকায়? অপেক্ষায় পরিবার, শিউরে উঠছে গোটা গ্রাম!