পিন্টু কুন্ডু , বালুরঘাট, ২৯ অক্টোবর— এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। মৃতর পরিবারের লোকেদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে সরকারী একশ্রেণীর কর্মীদের তোলাবাজি চলছে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। আর যাদের দৌরাত্ম্যেই সরকারি হাসপাতাল আজ যেন কসাইখানায় পরিনত হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি হাসপাতালের পুলিশ মর্গের। এখানে বসে দিনের পর দিন প্রকাশ্য দিবালোকেই সাধারণ মানুষের পকেট কাটছেন ওই অসাধু কর্মীরা বলে অভিযোগ । যাদের কাছে গরীব বা ধনির কোন পার্থক্যই নেই। মৃতদেহ পৌছাতেই তা সেলায়ের জন্য ভিন্ন দরে টাকা ধার্য্য করছেন সরকারী ওই কর্মীরা বলেও অভিযোগ। যাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ তো দুরের কথা উলটে মৃতর পরিবারের লোকেদেরই সমঝোতার পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতালের দায়ীত্বপ্রাপ্ত এক ওয়ার্ড মাস্টার। যে ঘটনায় রীতিমতো আলোড়ন ছড়িয়েছে গোটা দক্ষিন দিনাজপুরে।

জানা গেছে শুক্রবার হরিরামপুরের সৈয়দপুরের বাসিন্দা কুরবান আলীর ময়না তদন্ত করানো হয় বালুরঘাট পুলিশ মর্গে। স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কুরবান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। যার পর থেকে মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়ে তার পরিবার। অভিযোগ ময়নাতদন্তের পর তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে কর্তব্যরত হাসপাতালের সরকারী কর্মীরা। পোস্টমর্টেম করানো দেহ সাধারণভাবে সেলাই করিয়ে নিলে ২৮০০ টাকা এবং ভালো করে সেলাই করতে হলে ৩৫০০ টাকা দিতে হবে রোগীর পরিবারকে এমন কড়া নির্দেশিকাও দেন সেখানকার কর্মীরা বলেও অভিযোগ। আর এরপরে বিষয়টি নিয়ে মৃত ছাত্রের পরিবারের লোকেরা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের দারস্থ হলে সমঝোতার পরামর্শ দেন ওই দায়ীত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। যা সামনে আসতেই রীতিমতো আলোড়ন পড়েছে সীমান্ত অধ্যুষিত দক্ষিণ দিনাজপুরে। যেখানে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরকারি হাসপাতালে সমস্ত পরিষেবা বিনামূল্যে দেবার কথা ঘোষণা করেছেন, সেখানে খোদ সরকারী কর্মীদের প্রকাশ্যে এমন তোলাবাজির ঘটনা কার্যত প্রশাসনিক নজরদারিকেই প্রশ্ন চিহ্নে দাড় করিয়েছে।
মৃতের আত্মীয় হাবিবুর রহমান ও রফিকুল ইসলামরা জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে অন্যায় ভাবে টাকা তোলা হচ্ছে। মৃতর পরিবারের লোকেদের অসহয়তার সুযোগ নিয়ে চলছে রীতিমতো তোলাবাজি। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করতে সুপারের কাছে গেলে তিনি অনুপস্থিত থাকায় ওয়ার্ড মাস্টারকে নালিশ করেন। অসাধু ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার ইনচার্জ মলয় রাহা এদিন বলেন, টাকা নেওয়ার কোন নির্দেশিকা নেই এটা সঠিক। কিন্তু তারা এটা পেয়েই আসছে, তাই কিছু একটা সমঝোতা করে নিন। ডোমদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বা পুলিশ কেউই কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে না।