চাঁচল:১২ ডিসেম্বর:-গায়ে হলুদ শেষ,সম্পূর্ণ হয়েছে বিয়ের আয়োজন।বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন।গতকালই ছিল বিয়ের লগ্ন।বিয়ের তোড়জোড় চলছিল জরকদমে।তবে অষ্টম শ্রেনীর ওই যে কন্যা নাবালিকা।সেই খবর পুলিশ ও জেলা চাইল্ড লাইনের কর্মীদের কানে পৌঁছই।তৎপর হয়ে নাবালিকার বিয়ে রুখে দেয় তারা।গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাত্রের জামাইবাবুকে।অগ্রাহয়ন মাসের শেষের দিকে এমন ঘটনাটি ঘটে গেল মালদহের চাঁচল থানার ভাকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামে।
চাইল্ড লাইনের এক আধিকারিক সমীর রায় জানালেন ‘১০ ডিসেম্বর আমরা খবর পায়, চাঁচল-২ নম্বর ব্লকের ভাকরি জিপির ভবানীপুর গ্রামে দিনমজুরের ১৪ বছরের এক নাবালিকা কন্যার বিয়ে হতে যাচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে থানায় বিষয়টি জানিয়ে একটি জেনারেল ডায়েরি করি। সেদিনই আমরা মেয়ের বাড়িতে যাই। আমার সঙ্গে ব্লক প্রশাসনিক কর্তা এবং চাঁচল থানার পুলিশ আধিকারিকরা সেখানে ছিলেন। ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেদিন মেয়ের বাবা মুচলেকা দিয়ে আমাদের জানান, প্রাপ্তবয়স্ক না হলে তাঁরা মেয়ের বিয়ে দেবেন না। কিন্তু গতকাল ফের আমরা জানতে পারি, মেয়েটির বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আমরা ফের সেখানে যাই। বিয়ে বন্ধ করার কথা বলে আসি। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ফের জানতে পারি, মেয়ের পরিবার এই বিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। রবিবার সকালে আমি এনিয়ে থানায় এফআইআর দায়ের করেছি।
পাত্রের জামাইবাবুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পরিবারের বাকিরা সবাই পলাতক।মেয়ের দিদিমা বাসন্তী ঘোষের বক্তব্য,‘পাত্রী আমার নাতনি। নিমন্ত্রণ পেয়ে আমরা বিয়ের ভোজ খেতে গিয়েছিলাম। ১৪ বছরের মেয়ের কেন বিয়ে দিচ্ছিল, তা ওর বাবা-মা বলতে পারবে। গতকাল নাতনির বিয়ে ছিল। ওর বাবা পাগল। তাই অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল। আমি একবার বলেছিলাম, এত ছোট বয়সে বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অল্প বয়সে বিয়ে ঠিক করায় আমার ছেলে-বৌমা রাগ করে এই বিয়েতে আসেনি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসন বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।’

এদিকে এই ঘটনায় ধৃত পাত্রের জামাইবাবু ভরত ঘোষ বলেন, ‘আমি ছেলে পক্ষের লোক। আগে মেয়ের বয়স জানতাম না। বিয়েতে এসে শুনি, মেয়ের বয়স ১৪। আমার সঙ্গে যারা ছিল তারা সব চলে গিয়েছে।ছেলে বিয়ে করতে আসেনি। তবু মেয়ের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল।মেয়ের বাড়ি থেকে আমাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলেই আমরা চারজন এখানে এসেছিলাম। আমাকে পুলিশ তুলে নিয়ে এসেছে। বাকিরা কোথায় জানি না।
বাল্যবিবাহ যে সরকারি ভাবে দন্ডনীয় অপরাধ,ওই নাবালিকা নিজেও জানতেননা।তাই বিয়েতে মত দিয়েছিল বাবা মায়ের কথা শুনে।
ঘটনা প্রসঙ্গে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী ইন্সটিটিউশনের শিক্ষক নীহার রঞ্জন দাস বলেন,বাল্য বিবাহ দন্ডনীয় অপরাধ।এমন ঘটনা গ্রামাঞ্চলেই বেশি ঘটে থাকে।তবে বর্তমানে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সচেতনতা মূলক প্রচারের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ অনেকটা রোধ হয়েছে।অপ্রাপ্ত বয়সে কন্যার বিয়ে হলে সংসার গোছাতে অক্ষম হয়।এবং অল্প সন্তান সম্ভাবা হলে শারীরিক দিক দিয়ে ক্ষতি হতে পারে।এই বিয়ে রুখায় চাঁচল পুলিশ প্রশাসন ও চাইল্ডকে ধন্যবাদ জানায়।