১৫ কুইন্ট্যাল দেখিয়ে ১০ কুইন্ট্যাল! সরকারি ধান কেনায় ‘অদৃশ্য’ ৫ কুইন্ট্যালের কারসাজিতে ফুঁসছে কুমারগঞ্জ
বালুরঘাট, ৪ ডিসেম্বর —— কুমারগঞ্জে সরকারি ধান কেনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এল ভয়ঙ্কর গরমিল। খাতা-কলমে কৃষকপ্রতি ১৫ কুইন্ট্যাল ধান নেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে নেওয়া হচ্ছিল মাত্র ১০ কুইন্ট্যাল—এমন অভিযোগ সামনে আসতেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন স্থানীয় কৃষকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে যে অভিযোগ পেয়ে এলাকায় ছুটে যান দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কিষাণ খেত মজদুরের জেলা সভাপতি সাহেনশা মোল্লা। তার সামনেই ফুটে ওঠে ‘অদৃশ্য’ ধানের এই রহস্য। এরপরেই দিনভর অচল হয়ে যায় সরকারি ধান কেনার প্রক্রিয়া, উত্তেজনায় ফুসতে থাকে কুমারগঞ্জ।
অভিযোগ, কুমারগঞ্জের বিভিন্ন ধান কেনা শিবিরে কৃষকপ্রতি ৫ কুইন্ট্যাল ধান গায়েব করেই চালানো হচ্ছিল সরকারি ক্রয়। কৃষকরা জানিয়েছেন, খাতা-কলমে ১৫ কুইন্ট্যাল দেখানো হলেও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছিল মাত্র ১০ কুইন্ট্যাল। বিক্ষোভকারী কৃষক জ্যোৎস্না বর্মন ও সাবিনা ইয়াসমিনের কথায়, “সরকারি নিয়ম মতো ১৫ কুইন্ট্যাল ধান নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ১০ কুইন্ট্যাল নেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা বিক্ষোভে নেমেছি।”
অভিযোগ পেতেই ধান কেনা শিবিরে উপস্থিত হন কৃষক নেতা সাহেনশা মোল্লা। খাদ্যদপ্তরের আধিকারিকদের সামনেই ধরা পড়ে কারসাজির ছবি। এরপরই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন কৃষকদের এই বঞ্চনার চিত্র। তার দাবি, “সরকার যে অধিকার কৃষকদের দিয়েছে, তা কোনোভাবেই হরণ করা যাবে না। ১৫ কুইন্ট্যাল দেখিয়ে ১০ কুইন্ট্যাল নেওয়ার ঘটনা পুরোপুরি অনিয়ম। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।”
তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের নেতার উপস্থিতিতে কৃষকদের বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়। সকাল থেকে শুরু হওয়া ধান কেনার কাজ কার্যত থমকে দাঁড়ায়। অভিযোগ জমতেই তীব্র উত্তেজনায় ফেটে পড়ে এলাকা। কৃষকদের ধারাবাহিক প্রতিবাদে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে ধান ক্রয় কেন্দ্রগুলি।
অবশেষে সন্ধ্যায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কুমারগঞ্জের বিডিও শ্রীবাস বিশ্বাস জানান, “কিছুক্ষণ ধান কেনা বন্ধ ছিল। কৃষকদের সমস্যা শুনে খাদ্যদপ্তর সমাধানের চেষ্টা করছে। প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হস্তক্ষেপ করেছে।”
জেলার কৃষক মহলে প্রশ্ন—সরকারি ধান কেনায় এমন কারসাজি কীভাবে চলছিল এতদিন? আর কতদিনই বা কৃষকদের অধিকার হরণ হবে? যদিও বৃহস্পতিবারের এই প্রতিবাদে স্পষ্ট—আর চুপ করে সহ্য করতে রাজি নন কৃষকরা। তাদের দাবি, সরকারি হিসেবের ধান সঠিক পরিমাণেই নিতে হবে। তার কম হলে রাস্তায় নেমেই জবাব দেবেন তারা।

















