হাসপাতাল থেকে সরছে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, নিরাপত্তায় বাড়ছে সিসিটিভি!
বালুরঘাট নার্সিং হোস্টেলে দুষ্কৃতী তাণ্ডব নিয়ে কড়া অবস্থান স্বাস্থ্য দপ্তরের।
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৬ ফেব্রুয়ারী ———- নার্সিং হোস্টেলে একের পর এক দুষ্কৃতী হামলার ঘটনায় কার্যত আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বহিরাগতদের দাপট, গভীর রাতে নার্সিং হোস্টেলে অনুপ্রবেশ, সিসিটিভি ভাঙচুর— একাধিক ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন নার্সরা। যা নিয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগের পরও যখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, তখন কড়া ব্যবস্থা নিল স্বাস্থ্য দপ্তর। এবার হাসপাতাল চত্বর থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সমস্ত বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। শুধুমাত্র ১০২ নম্বরের মাতৃযান ও সরকারি নিশ্চয় যান চলবে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে। নজরদারি আরও বাড়াতে বসানো হচ্ছে নতুন সিসিটিভি, নির্মাণ হবে উঁচু প্রাচীরও। রবিবার বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে একথাই জানিয়েছেন দক্ষিন দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাস। তার দাবি, নার্সিং হোস্টেল দুস্কৃতি তান্ডবের ঘটনায় এপর্যন্ত পুলিশ যে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে তারা দুজনেই এম্বুলেন্সের চালক। সুতরাং এই ঘটনা নিয়ে এম্বুলেন্স চালকদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া হাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে। তিনি জানিয়েছেন, নিশ্চয় যান ও ১০২ নম্বরের মাতৃ যান ও সরকারী এম্বুলেন্স ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে কোন বেসরকারি এম্বুলেন্স থাকবে না। শুধু তাই নয়, সমস্ত নিশ্চয় যান, মাতৃযান বা এম্বুলেন্স গুলি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরেই রাখতে হবে। একই সাথে তিনি আরো জানিয়েছেন, যদি বেসরকারি কোন এম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে রাখতে হয় তবে সেসব এম্বুলেন্স চালকের যাবতীয় তথ্য হাসপাতালে নথিভুক্ত রাখতে হবে। নার্সিং হোস্টেলে দুস্কৃতি তান্ডবের পর হাসপাতাল চত্বরে স্বাস্থ্য দপ্তরের এমন কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত কে ঘিরে রীতিমতো আলোড়ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাস জানিয়েছেন, নার্সিং হোস্টেলের নিরাপত্তায় এর আগেই ১২ টি সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল। তবে আরো নজরদারি বাড়াতে ৮ টি অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একইসাথে উচ্চতাবিশিষ্ট প্রাচীর নির্মানের একটি পরিকল্পনাও পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বালুরঘাট হাসপাতাল চত্বরে থাকা নার্সিং হোস্টেলে চলতি মাসে বেশ কয়েকবার দুস্কৃতি তান্ডবের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রথমে নার্সিং হোস্টেলের ভেতরে সিসিটিভি ভাঙাসহ তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ওই ঘটনার মাত্র তিনদিনের মাথায় ফের নার্সিং হোস্টেল এর ভেতরে বহিরাগতদের আনাগোনার আতঙ্ককে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় ওই হোস্টেল চত্বরে। যাকে ঘিরে আবাসিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্কের পরিবেশও। যা নিয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগও দায়ের হয় বালুরঘাট থানায়। যে ঘটনার তদন্ত নেমে পুলিশ দুই যুবককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। যারা প্রত্যেকেই এম্বুলেন্স চালক। আর এরপরেই হাসপাতাল চত্বরে এম্বুলেন্স ও তার চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশকে সাথে নিয়ে শক্তহাতে ব্যবস্থা গ্রহনে উদ্যোগী হয় স্বাস্থ্য দপ্তর।
বারবার দুষ্কৃতী হামলার জেরে নার্সরা প্রবল আতঙ্কে ছিলেন। এখন নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর হলে নার্সিং হোস্টেল ও হাসপাতাল চত্বরে শান্তি ফিরবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ কি সত্যিই দুষ্কৃতীদের দাপট থামাতে পারবে? নার্সরা কি নির্ভয়ে রাত কাটাতে পারবেন? উত্তর দেবে সময়।