হাসপাতালের শিশুবিভাগে দাদাগিরি! চিকিৎসকের আসনে বসে কাগজপত্র কেড়ে নিলেন তৃণমূল নেতা, তুমুল হুলস্থুল বালুরঘাটে
বালুরঘাট, ২২ আগষ্ট ——- চিকিৎসক সেজে হাসপাতালের শিশুবিভাগে ঢুকে দাদাগিরি মদ্যপ তৃণমূল নেতার। ডাক্তারের কাগজ দেখতে চেয়ে ধমক কর্তব্যরত চিকিৎসক কেও। শুক্রবার সকাল থেকে এই ঘটনাকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় বালুরঘাট সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের শিশুবিভাগে। অভিযোগ, এদিন সকালে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের শিশুবিভাগে রোগী ভিড় তখন তুঙ্গে। আর ঠিক সেই সময়েই চিকিৎসক সেজে আচমকাই বিভাগে ঢুকে পড়েন মাহিনগর এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় ঠিকাদার রাজু পাল। তৃণমূল নেতা বলেই পরিচিত ওই ব্যক্তি সোজা চিকিৎসকের আসনে বসে পড়েন। এরপর উপস্থিত মহিলাদের কাছ থেকে শিশুদের চিকিৎসার কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে একে একে দেখতে থাকেন। ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান কর্তব্যরত চিকিৎসক। যা নিয়ে আপত্তি জানাতেই উল্টে চিকিৎসকের কাছেই কাগজপত্র দাবি করে বসেন অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতা। যাকে ঘিরে চিকিৎসকের সাথে মুহূর্তে শুরু হয় তর্কাতর্কি। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় গোটা শিশুবিভাগ জুড়ে।
এরপরেও চিকিৎসকের বারণ অগ্রাহ্য করে কর্তৃত্ব দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন রাজু পাল নামে ওই তৃণমূল নেতা। রোগীর-আত্মীয়দের সামনে চিকিৎসকের সঙ্গে এমন অশোভন ব্যবহার দেখে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ ছড়ায় চারদিকে। পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। অভিযুক্তকে হাসপাতাল থেকে টেনে বার করে নিয়ে যায়। ফলে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন চিকিৎসক এবং রোগীর আত্মীয়রা।
এদিন শিশুর চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে আসা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামের এক ব্যক্তি বলেন, “আমি মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি একজন চেয়ারে বসে কাগজপত্র টেনে নিয়ে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন। তবে তিনি মদ্যপ ছিলেন কি না আমি বলতে পারব না, তবে আচরণ অস্বাভাবিক ছিল নিশ্চিত।”
ঘটনা নিয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রঞ্জন কুমার মুস্তাফি জানান, “অভিযুক্তকে নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে পাঠিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’’
ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বালুরঘাট টাউন তৃণমূল সভাপতি প্রীতম রাম মণ্ডল বলেন, “আমাদের দলে রাজু পাল নামে কোনও ব্যক্তি নেই। তিনি ব্যক্তিগত পরিচয়ে তৃণমূলের নাম ব্যবহার করলে তার দায় তৃণমূল নেবে না।”
চিকিৎসকদের প্রশ্ন, শিশুবিভাগের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় যদি অবাধে কেউ ঢুকে এমন দাদাগিরি চালাতে পারে, তবে রোগী ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা কোথায়? রাজনৈতিক পরিচয় দেখিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ‘ক্ষমতাবাজি’ করার ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। চিকিৎসক মহলের দাবি, এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, নইলে হাসপাতালের পরিবেশ আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে।



















