হরিরামপুরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই ২০০ বিঘা জমির গম, সর্বস্বান্ত কৃষকেরা
বালুরঘাট, ২৯ মার্চ —— দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর ব্লকের পুন্ডরী গ্রাম শনিবার দুপুরে পরিণত হলো বিভীষিকাময় এক ধ্বংসযজ্ঞের মঞ্চে। মুহূর্তের মধ্যেই লেলিহান শিখা গ্রাস করল বিস্তীর্ণ গমের ক্ষেত, পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রায় ২০০ বিঘা জমির সোনালি ফসল। এক নিমেষে স্বপ্ন ভস্মীভূত! কৃষকের সারা বছরের পরিশ্রম, ঘাম আর আশার চাষ যেন মুহূর্তের মধ্যেই মিলিয়ে গেল ধোঁয়ার কুন্ডলীতে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সানা পুকুর এলাকা থেকে সূচিত হয় এই ভয়াবহ আগুন। সন্দেহ করা হচ্ছে, অসতর্কভাবে ফেলে দেওয়া একটি জ্বলন্ত বিড়ির টুকরো থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। প্রচণ্ড গরমের তেজ এবং হালকা বাতাসের প্রবাহে মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। কৃষকদের চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে তাদের সযত্নে গড়া ক্ষেতের সোনালি শস্য।
গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে আগুন নেভানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করলেও তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। দমকল বাহিনীর খবর দেওয়া হলে বংশীহারী থেকে ছুটে আসে দুটি ইঞ্জিন। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে সব শেষ! চারপাশে শুধুই ছাই আর পোড়া গমের গন্ধ।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে অন্যতম অখিল মাহাতো ও কাশীনাথ মাহাতো। চোখে জল, কণ্ঠে বিষাদের সুর নিয়ে তাঁরা বলেন, “বছরের পর বছর ধরে যে স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম, তা এক নিমেষে পুড়ে গেল! কীভাবে চলবে সামনের দিনগুলো? আমাদের তো আর কিছুই রইল না!”
ঘটনার খবর পেয়ে পুন্ডরী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শাজাহান বাদশা ও হরিরামপুর ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
হরিরামপুর ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা অমলেশ ঘোষ জানান, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা কিছুটা হলেও ক্ষতিপূরণ পান।
এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় বাসিন্দারা কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, মাঠ পাহারার ব্যবস্থা করা ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কৃষকদের আবেদন, “প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, না হলে আরও কত কৃষকের স্বপ্ন এইভাবে ধূলিসাৎ হবে, তার হিসাব নেই!”
কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য এটি এক চরম দুর্দিন। এখন প্রশাসনের করণীয় একটাই—যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।