স্টার সংবাদের খবরেই চোখ ভিজল, মায়ের কান্না শুনে পাঁচদিন পর ঘরে ফিরল বড় মালঞ্চার দুই নিখোঁজ স্কুলছাত্রী

0
298

স্টার সংবাদের খবরেই চোখ ভিজল, মায়ের কান্না শুনে পাঁচদিন পর ঘরে ফিরল বড় মালঞ্চার দুই নিখোঁজ স্কুলছাত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট:
নিরুদ্দেশ ছিল পাঁচদিন। সন্ধ্যা নামলেই কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মা। বারবার তাকিয়ে ছিলেন দরজার দিকে—ফিরবে কি তার দুই ফুলের মতো মেয়ে? অবশেষে শুক্রবার সকালে এক অলৌকিক ফেরার গল্প লেখা হলো দক্ষিণ দিনাজপুরের বড় মালঞ্চা গ্রামে। সংবাদমাধ্যমে মায়ের আর্তনাদ, চোখের জল, ‘স্টার সংবাদ’-এর ভিডিও দেখে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে বাড়ির পথ ধরল দুই বোন—রত্না ও তার ছোট বোন।

মা বন্দনা দাসের কথায়, “সকালে চোখ মেলে দেখি দু’টো মেয়েই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। যেন স্বপ্ন দেখছি।” পাশে তখন স্তব্ধ পাড়া, চোখে জল প্রতিবেশীরও।

বালুরঘাটের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বড় মালঞ্চা এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর উত্তম দাসের দুই মেয়ে, স্থানীয় হাইস্কুলের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রী, রবিবার সন্ধে থেকে নিখোঁজ ছিল তারা। মা বন্দনা দাস পেশায় বিড়ি শ্রমিক, ঘটনার পরদিনই বালুরঘাট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। যে অভিযোগে পাশের গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে সন্দেহজনক সম্পর্কের কথাও জানান তিনি।

কিন্তু দুই বোনের মুখে যেন অন্য কাহিনি। রত্নার চোখে জল, কাঁপা গলায় জানায়, “মায়ের বকুনি, মাঝে মাঝে মার—এই অভিমানেই বাড়ি ছেড়েছিলাম।” সঙ্গে ছিল ৪০০ টাকা। প্রথমে মালদা, তারপর অজানা স্টেশনের লম্বা পথ পেরিয়ে শিয়ালদহ। সেখানেই জীবন বদলানো সেই মুহূর্ত—এক যাত্রীর মোবাইলে চলছিল তাদের রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হবার খবর। এরপর সেই যাত্রীর মোবাইল নিয়ে স্টার সংবাদের খবরে দেখেন তাদের মা বন্দনা কাঁদছেন দুই মেয়েকে হারিয়ে। অঝোর কান্না। “মায়ের কান্না শুনেই বুঝলাম, আর থাকা যায় না,” জানায় ছোট বোন।

রত্না জানায় সেই যাত্রীর নাম সুমিত, তাদের খাবার খাইয়ে ট্রেনে তুলে দেন, ফেরার টিকিট কেটে। তার সাহচর্যে তারা পৌঁছে যায় গঙ্গারামপুর। সেখান থেকেই একেবারে সোজা বাড়ি।

পুলিশ অবশ্য তাদের জেরা করে নিশ্চিত হয়েছে, কোনও অপহরণ বা শারীরিক হেনস্থার শিকার হয়নি তারা। শুধুই অভিমান, শুধুই শৈশবের এক ভুল পা।

আজ সেই ভুল শুধরে মা’র কোলে ফিরেছে দুই কন্যা। পাশে বসে চোখ মুছছেন মা বন্দনা, বলেন, “ওরা ফিরে এসেছে—এইটুকুই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।”

এ যেন বাস্তবের পর্দায় লেখা এক সিনেমার চিত্রনাট্য। সংবাদমাধ্যমের সংবেদনশীলতা আর এক যাত্রীর সহমর্মিতা মিলে ফিরে এল দুই হারিয়ে যাওয়া প্রাণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here