সীমান্তে শিশু পাচার চক্রের ছায়া! বালুরঘাট সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে নবজাতক শিশু চুরির চেষ্টা, গ্রেফতার দুই মহিলা
বালুরঘাট, ৯ অক্টোবর —- রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে সরকারি হাসপাতালে শিশু পাচার চক্রের সক্রিয়তা! বালুরঘাট সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে নবজাতক শিশু চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে পাকড়াও হলেন দুই মহিলা। বুধবার রাতে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। যদিও প্রসূতি বিভাগের কর্মীদের তৎপরতায় ওই মহিলাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে ধৃত দুই মহিলার নাম মেনকা মার্ডি ও সোনালী মুর্মু। পুলিশ সূত্রে খবর, মেনকার বাড়ি সীমান্তবর্তী চিঙ্গিশপুরে, আর সোনালীর বাড়ি ভাটরা গ্রামে। বুধবার রাতে রোগীর আত্মীয়র পরিচয় দিয়েই হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ে তারা। পরিকল্পনা ছিল ভয়ঙ্কর— অচৈতন্য অবস্থায় থাকা এক মায়ের কোলে থাকা সদ্যজাত শিশুকে চুরি করে সীমান্ত পেরিয়ে পাচার করা। কিন্তু প্রসূতি বিভাগের কর্মীদের তৎপরতায় ধরা পড়ে যায় তাদের দুঃসাহসিক চক্রান্ত। যে ঘটনাকে ঘিরে মুহূর্তে হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভিড় জমে হাসপাতালের করিডরে। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পুলিশে। বালুরঘাট থানার পুলিশ এসে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা জানিয়ে বালুরঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। যে অভিযোগ পেয়েই ওই দুই মহিলাকে এদিন আদালতে পাঠিয়েছে বালুরঘাট থানার পুলিশ। এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। খোদ হাসপাতাল সুপার নিজেও সরব হয়েছেন প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। অতি অল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে কিভাবে এতবড় হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রদান করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাজও লক্ষ্য করা যায় সুপারের কপালে। এদিন যা নিয়ে দফায় দফায় আলোচনাও সেরেছেন তিনি। এদিকে গোটা হাসপাতাল পরিদর্শন করে হাসপাতাল চত্বরে সঠিক নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন ডিএসপি সদরও। তবে সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রাতের অন্ধকারে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে কিভাবে নবজাতক শিশুকে চুরির ফাঁদ পেতেছিল ওই দুই মহিলা তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। সীমান্তে শিশু পাচার নিয়ে ওই দুই মহিলার পিছনে আরো কোন বড় চক্র জড়িত রয়েছে কিনা তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
ডিএসপি সদর বিক্রম প্রসাদ জানান, “দুই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তাঁরা সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা। শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে কোনও যোগ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে গভীর তদন্ত চলছে। পাশাপাশি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আমরা খতিয়ে দেখেছি। কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে হাসপাতালের ভেতরে এই ঘটনা ঘিরে চরম উদ্বেগে চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, “এধরনের ঘটনা আমাদের হাসপাতালের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। আমরা ইতিমধ্যেই থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। নিরাপত্তা বাড়াতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। রোগীর আত্মীয়দের জন্য ‘হলুদ প্রবেশ কার্ড’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রসূতি, শিশু বিভাগে চিকিৎসকদের ভিজিট সময় নির্দিষ্ট করা হচ্ছে, যাতে অচেনা কারও অবাধ প্রবেশ বন্ধ হয়।”
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে— সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে রাতের অন্ধকারে শহরের সরকারি হাসপাতালে অনায়াসে ঢুকে পড়া এত সহজ কীভাবে? কে বা কারা সাহায্য করেছিল অভিযুক্তদের? শিশু চুরির এই চেষ্টার পিছনে আদৌ কি বড় কোনও আন্তর্জাতিক পাচার চক্র লুকিয়ে রয়েছে?— সেই রহস্যের উত্তর খুঁজতেই এখন তদন্তে নেমেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
শিশু চুরি প্রতিরোধে জোরদার নজরদারি শুরু হয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। ডিএসপি সদর নিজে ঘুরে দেখেছেন প্রতিটি বিভাগ। তবুও, ঘটনার পর বালুরঘাট জুড়ে একটাই প্রশ্ন— “যদি কর্মীরা সজাগ না থাকতেন, তাহলে আজ হয়তো এক নবজাতক মায়ের কোলে ফিরতো না…”