সীমান্তে ‘এস আই আর’ আতঙ্ক! নামের বিভ্রান্তিতে আত্মঘাতী কৃষক, কুমারগঞ্জে উত্তেজনা
বালুরঘাট, ১১ নভেম্বর —–ভোটার তালিকায় টাইটেলের ভুল! আর সেই একফোঁটা বিভ্রান্তিই কেড়ে নিল এক কৃষকের প্রাণ। দক্ষিণ দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী কুমারগঞ্জ ব্লকের ডাঙ্গারহাট আগাছা এলাকায় সোমবার গভীর রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন বছর পঁয়ষট্টির কৃষক ওছমান মন্ডল।
ঘটনার পর থেকেই থমথমে গ্রাম। স্থানীয়দের দাবি, ভোটার কার্ডে তাঁর নাম ছিল ওছমান মন্ডল, কিন্তু ভোটার তালিকায় লেখা হয়েছে ওছমান মোল্লা। এই টাইটেল বিভ্রান্তি নিয়েই গত কয়েক মাস ধরে ভীষণ মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। ‘এস আই আর’-এর ভয়ে দিন কেটেছে উদ্বেগে, রাতে ঘুম হয়নি। সেই ভয়ই শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঠেলে দিল মৃত্যুর মুখে।
পরিবারের এক সদস্য তোরাব মন্ডল বলেন,
কাকা বলতেন নামের ভুলটা ঠিক না হলে বড় বিপদ হবে। কারও সঙ্গে ঝামেলা ছিল না, শুধু কাগজের ভুলেই শেষ হলেন।”
অপর এক আত্মীয় মহাশ্বেতা বিবি বলেন, এসআইআর আতঙ্কের কারণেই আত্মহত্যা করেছেন ওছমান। কারণ ওছমানের ভোটার কার্ডে ওছমান মন্ডল থাকলেও ভোটার লিস্টে ওছমান মোল্লা রয়েছে৷ যা নিয়ে তিনি মানসিক ভাবে অস্থির ও আতঙ্কে ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় যেতেন কি করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র উত্তেজনা। ভোররাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার ঘটনাই নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
তবে প্রশাসনিক তদন্তের আগে থেকেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের জেলা নেতা নিখিল সিংহ রায় বলেন,এস আই আর আতঙ্কে মানুষ আজ মানসিক অবসাদে ভুগছেন। ওছমানবাবু তার বলি। আমরা পরিবারটির পাশে আছি।
বিজেপি অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ করেছে।জেলা নেতা বাপী সরকার বলেন,তৃণমূল মৃতদেহ নিয়েও রাজনীতি করছে। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হোক, আতঙ্ক ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা বন্ধ করা উচিত।
তবে রাজনীতির এপিঠ-ওপিঠের লড়াইয়ের মাঝেই এক নিঃশব্দ প্রশ্ন ছুঁয়ে যাচ্ছে ডাঙ্গারহাটের মাটিকে—একটা নামের ভুল, একটা টাইটেলের অমিল—এতটাই কি ভয়ঙ্কর? ভোটার তালিকায় অক্ষরের ভুলে যখন একটি পরিবারের সমস্ত আলো নিভে যায়, তখন প্রশাসনিক গাফিলতির দায় থেকে কে বা কিভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে—সেই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সীমান্তের এই নিস্তব্ধ গ্রামে

















