সাংসদের খাসতালুকে তৃষ্ণার কাহিনী! পাঁচ বছরে শুধুই গর্ত আর আধার কার্ড জমা হয়েছে, বলছেন বাসিন্দারা
বালুরঘাট, ৬ মে —— গর্ত খোঁড়া হয়েছে। বসানো হয়েছে পাইপলাইন। আধার কার্ড তোলা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু ভূষিলার জমি আজও চেনে না পানীয় জলের ছোঁয়া। বালুরঘাট শহর লাগোয়া ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রামে জলের জন্য তৃষ্ণার্ত শিশু, নারী, বৃদ্ধেরা তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। সরকারি প্রকল্প এসেছে—শুধু এসে পৌঁছায়নি সেই জলের একফোঁটাও।
বালুরঘাট শহর ঘেঁষা এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূষিলা গ্রামে প্রায় দুইশো তপশিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারের বসবাস। মূলত কৃষিকাজের উপর নির্ভর করেই যাদের দিনযাপন। যে পঞ্চায়েত অফিসের পিছনেই রয়েছে গ্রামটি। গ্রামবাসীদের জীবন যুদ্ধ কঠিন হলেও, সবচেয়ে কঠিন হয়ে উঠেছে জল সংগ্রহ। পাঁচ বছর আগে ‘নল-জল’ প্রকল্পের নাম করে গর্ত খোঁড়া হয়েছিল গ্রামে। ট্যাপ বসানো হয়েছিল, পাইপ ছড়ানো হয়েছিল মাটির নিচে। আধার কার্ড তোলা হয়েছিল বারবার। কাগজে-কলমে ‘জলযোগ’ বুঝি সম্পূর্ণ। অথচ বাস্তবে? পঞ্চায়েত অফিসের পাশের এই গ্রামে আজও জল মেলে না এক ফোঁটাও।
সরস্বতী সরেন, শান্তি পাহান, শিমল কিস্কু ও সুরেশ ঘোষেরা আঙুল তুলেছেন পঞ্চায়েতের দিকে। তাঁদের অভিযোগ, “নেতারা এসেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘এবার জল আসবেই’। কিন্তু এসেছে শুধু মরচে ধরা ট্যাপ, ঝুলে থাকা পাইপ আর শুকনো প্রতিশ্রুতি।” দিতে হয়েছে একাধিকবার আধার কার্ডও।
যে পঞ্চায়েতের ঠিক পেছনেই এই গ্রাম, সেই পঞ্চায়েতটিই আবার বিজেপি পরিচালিত। এই পঞ্চায়েতই পরিচিত সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের ‘খাসতালুক’ হিসেবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন—“যেখানে সাংসদের এত প্রভাব, সেই পঞ্চায়েতেই কেন পাঁচ বছরেও মেলেনি জল? দায় কার?”
যদিও ভাটপাড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শিবু সরকার বলেন, “বিষয়টি একাধিকবার পিএইচই দফতরকে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি সার্ভে হয়েছে। আশ্বাস দিয়েছে তারা।”
কিন্তু ভূষিলার মানুষ আশ্বাসে আর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। তাঁদের দাবি—এবার আর নয় প্রতিশ্রুতি, চাই স্থায়ী ব্যবস্থা। “জীবনের প্রশ্নে ভিক্ষা নয়, অধিকার চাই”, স্লোগান তুলে তাঁরা প্রস্তুত আন্দোলনের পথেও।
ভূষিলা জলের জন্য কাঁদে। আর প্রশাসন কাগজে জল ঢালে—এ যেন বাংলার গ্রামীণ বাস্তবতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি।