পিন্টু কুন্ডু , বালুরঘাট, ১১ জুন —— শ্মশানযাত্রী সেজে এসে ডাকাতি ব্যবসায়ীর বাড়িতে, ঘটনায় তুমুল চাঞ্চল্য তপনের করদহে। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডাকাত দল বেধে রেখে যায় ব্যবসায়ীর স্ত্রী কেও । দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চয়েতের করদহ এলাকার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যেও। পুলিশ জানিয়েছে অপহৃত ওই ব্যবসায়ীর নাম অসীম প্রামাণিক। তার স্ত্রী রাখি প্রামাণিককে বৃহস্পতিবার রাতে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় বেঁধে রেখে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা । অপহরণ করার চেষ্টা করে তাদের দশ বছরের ছেলে শুভজিৎ প্রামাণিককেও। যদিও তাতে ব্যর্থ হয়েছে ডাকাতদল বলে দাবি পরিবারের। শুক্রবার সকাল থেকে এই ঘটনা নিয়ে আতঙ্কিত বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন তপন থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। যদিও ঘটনার তদন্তে নামা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তপন থানার আইসি।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রের খবর, পেশায় মুদি ব্যবসায়ী অসীমবাবু রোজকার মতো বৃহস্পতিবার রাতেও স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। সেইসময় অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি নিজেকে শ্মশানযাত্রী পরিচয় দিয়ে বারবার ফোন করে রুটি চাইছিলেন বলে অভিযোগ । ফোনে তিনি রুটি দিতে অস্বীকার করলে রাতেই ব্যবসায়ীর বাড়িতে চলে আসেন খদ্দের সেজে আসা সেই দুস্কৃতি। বাড়ির বাইরে থেকে ফের ব্যবসায়ী অসীম কে শ্মশান যাত্রীর পরিচয় দিয়ে রুটি নেবার জন্য কাকুতিমিনতি করে ফোন করেন সেই দুস্কৃতিরা বলেও অভিযোগ। যারপরে কিছুটা মানবিকতা দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতেই ডাকাতদলের ফাঁদে পড়ে যান ব্যবসায়ী অসীম প্রামানিক। প্রথমে ৫০ টি রুটি এবং তারপর সেগুলি ব্যাগে ঢোকাবার কৌশল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে তিন দুস্কৃতি। যার পরেই আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয় অসীম নামে ওই ব্যবসায়ীর উপর। যার চিতকার শুনে স্ত্রী রাখী প্রামানিক ছুটে আসতেই তাকেও মারধর করে দুস্কৃতিরা বলে অভিযোগ। হাত-পা বেধে রেখে বাড়িতে লুটপাট চালানোর অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। নগদ কয়েকলক্ষ টাকা সহ যাবতীয় সোনার গহনা লুট করে দুস্কৃতিরা। একমাত্র ছেলেকে অপহরণ করার চেষ্টা করলেও বাড়ির এক আত্মীয়র বুদ্ধিমত্তায় তা রক্ষা পায়। যদিও সবশেষে ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে বেধে রেখে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা অসীম কে তুলে নিয়ে চম্পট দেয় ডাকাতদল। গাড়ি নিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যেতেই প্রতিবেশীদের ফোন করে পুরো ঘটনা জানান ব্যবসায়ীর বাড়িতে থাকা তার এক আত্মীয়। বাঁধন মুক্ত করা হয় আক্রান্ত ওই মহিলাকে। পুরো ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় করদহ এলাকায়। যারপরেই ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় পৌছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তপন থানার পুলিশ। যদিও এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি অপহৃত হওয়া ওই মুদি ব্যবসায়ীও।

প্রতিবেশী উত্তম রায় জানিয়েছেন, জিনিসপত্র নেওয়ার পরে আগ্নেয়াস্ত্র দেখানোর সময় অসীম ডাকাত দলের লোকজনকে চিনতে পেরেছিল। তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিল, ও তোরা। আর যার পরেই তাকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

ব্যবসায়ীর স্ত্রী রাখি প্রামাণিক জানিয়েছেন, চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুনেই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তার পরেই তাকে মারধর করে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে সমস্ত টাকা পয়সা ও সোনার গহনা লুটে নেয় দুস্কৃতিরা। তাকে বেধে রেখে তার স্বামী কে নিয়ে পালিয়ে যায় সকলেই। বাড়ির ভেতরে তিনজন সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকলেও বাইরে গাড়িতে আরো অনেকেই ছিল।

ব্যবসায়ীর ভাইঝি সূপর্ণা প্রামানিক বলেন, সে বুদ্ধি করে তার ছোট ভাইকে লুকিয়ে রেখেছিল। সকলে চলে যাওয়ার পর প্রতিবেশীদের খবর দিয়েছেন।

তপন থানার আইসি দীপজ্জ্বল ভৌমিক জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সম্পূর্ণ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।