শিল্পসত্ত্বাকে জাগাতে বয়সকে হার মানিয়েছেন বালুরঘাটের ৯৫ উর্দ্ধ প্রভাস মহন্ত। নানা কারুকার্যে সাজিয়ে তোলা তালপাতার হাতপাখাই আজ যেন দৃষ্টান্ত নতুন প্রজন্মের কাছে
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২২ মে:——- ইচ্ছাশক্তির কাছে যেকোন বয়সই যে হার মানে চকভৃগুর ৯৫ ঊর্দ্ধ প্রভাসবাবু যেন তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। শুধুমাত্র গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নিজের জীবনকে বাজি রেখে বাচিঁয়ে চলেছেন শিল্পসত্ত্বা। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যার নিমেষেই তালগাছে উঠে পড়ে তালপাতা পাড়া দেখে অবাক হন প্রতিবেশীরাও। তাদের কথাতেই বৃদ্ধ প্রভাস মহন্ত আজ নতুন প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় তালপাতার পাখার ব্যবহার এখন প্রায় লাটে উঠেছে। গ্রাম ছাড়া এই পাখার প্রচলন তেমন না থাকায় হাতপাখা তৈরির কারিগররাও যেন আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রাজ রাজা থেকে ব্রিটিশ আমল ও জমিদারি ব্যবস্থাতেও একসময় বড় তালপাতার পাখার প্রচুর ব্যবহার ছিল। যা কালের আবর্তে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে কারিগরি শিল্পের দৌরাত্ম্যে প্লাষ্টিকের হাত পাখা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শহুরে মানসিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এই শিল্প। তবে কোনভাবেই প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে হারিয়ে দিতে যেতে নারাজ বৃদ্ধ প্রভাসবাবু। নিজের জীবনকে বাজি রেখে ৯৫ বছর বয়সেও শিল্পসত্ত্বাকে ধরে রাখতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে চলেছেন বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের কুয়ারণ এলাকার বাসিন্দা প্রভাস মহন্ত। তালপাতার হাতপাখা তৈরি করার পুরনো এই পেশাটাকে ধরে রাখার জন্য এখনও হাত পাখা তৈরির কাজ করছেন তিনি। বিগত ৪৫ বছর ধরে এই শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে রয়েছেন তিনি। কয়েক দশক ধরে যাকে একাজে সাহায্য করে চলেছেন তার স্ত্রী কনিকা মহন্তও। নিজের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামের তাগিদে পুরনো শিল্পসত্ত্বাকে ধরে রাখতে আজো মুহুর্তেই তালগাছে উঠে তালপাতা পাড়তে দ্বিধা বোধ করেন না বৃদ্ধ প্রভাস মহন্ত। যে ছবি দেখলে অনেকেই চমকে যেতে পারেন। শুধু তাই নয় এরপর ওই বৃদ্ধ দম্পতির হাতের নানা কারুকার্যে সেজে ওঠে তালপাতার হাতপাখা। যা পাড়ি দেয় কলকাতা, শিলিগুড়ি, মালদা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা দামের রকমারি এই হাতপাখার আজো বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেই দাবি করেছেন শিল্পী প্রভাস মহন্ত।
তার কথায়, ‘গাছে উঠে তালপাতা, গাছের পাতলা বাকল সহ বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে পড়তে হয়। এমনকি বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাত পাখার সরঞ্জামের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ টা হাত পাখা তৈরি করি। গ্রামের কিছু মানুষ এখনও তা কেনেন। কিন্তু সেই জায়গাও সংকীর্ণ হয়ে আসছে। সরকারি তরফে কোনও সাহায্য বা ভাতা পেলে এই শিল্পের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব।’
স্ত্রী কনিকা মহন্ত বলেন, শহরের প্রচুর লোক এসে এই হাতপাখা নিয়ে যায়। তিনি ও তার ছেলে স্বামীকে গাছে উঠতে নিষেধ করলেও তিনি তা শোনেন না। ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজের মতো করে আজো পুরনো কায়দা অবলম্বন করে হাতপাখা তৈরি করেন তিনি।