শাড়ি বোনার কাজে ব্যস্ত দুই প্রতিবন্ধী ভাই

0
33

শাড়ি বোনার কাজে ব্যস্ত দুই প্রতিবন্ধী ভাই, গঙ্গারামপুর ঠেঙ্গাপাড়ায় বিশেষ প্রতিবেদন দেখুন আমাদের ক্যামেরায়
শীতল চক্রবর্তী বালুরঘাট ২ ডিসেম্বর দক্ষিণ দিনাজপুর।দাদা মূক ও বধির। ভাই একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী। তবুও হার মানেননি ওঁরা। ঠোঁট দিয়ে স্মার্টফোন চালিয়ে সুতোর ডিজ়াইন তৈরি করেন ভাই। আর দাদা হুবহু সেই ডিজ়াইন ফুটিয়ে তোলেন শাড়িতে। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁরা এ ভাবেই শাড়ি বুনে চলেছেন।
মনের জোর আর অদম্য ইচ্ছেশক্তি থাকলে যে সব বাধাই জয় করা যায় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন দুই ভাই, অনন্ত সরকার ও প্রশান্ত সরকার।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের ৩/২ বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠেঙাপাড়ায় এলেই ওই দুই ভাইয়ের দেখা মিলবে।
সরকার পরিবারের আক্ষেপ, বহু বার আবেদন করেও জোটেনি সরকারি একটি ঘর। দুই ভাইয়ের প্রতিবন্ধী ভাতা চালু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হয়েছে তার কারণও পরিবারের কেউ জানেন না। পড়শিরাও চাইছেন, এমন অবস্থায় ওই দুই ভাইয়ের পাশে দাঁড়াক প্রশাসন।
জন্ম থেকেই দুই ভাই প্রতিবন্ধী। এখন তাঁদের উপর ভর করেই চলছে সংসারের চাকা। বাবা অশ্বিনী কুমার সরকার মারা যান বছর নয়েক আগে। তারপরে বেশ বিপাকে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। দুই ভাইকেই তখন সংসারের হাল ধরতে হয়। জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে তাঁরা বেছে নেন পূর্বপুরুষের পেশা তাতকেই মূক ও বধির অনন্ত তাঁরই সাতা একজনকে জীবনসঙ্গী
হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁদের বছরখানেকের এক সন্তানও রয়েছে।
ছোট ভাই প্রশান্ত একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেও কথা বলতে পারেন। তিনি মোবাইল দেখে কাপড়ের ডিজ়াইন তৈরি করেন, সুতোর হিসেব রাখেন। আর অনন্ত সে ভাবেই কাপড় বোনেন। প্রশান্ত বলছেন, ‘শরীরের দোহাই দিয়ে চুপ করে বসে থাকলে তো না-খেয়ে মরতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য কিছু একটা তো করতেই হবে। তাই দুই ভাই মিলে বেছে নিয়েছি তাঁতকেই।’
প্রশান্ত, অনন্তের মা গীতারানি সরকার ও এক আত্মীয়র কথায়, ‘বড়টা কথা বলতে না-পারলেও চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু ছোটটার কষ্ট চোখে দেখা যায় না। তারপরেও এ ভাবেই কষ্ট করে অদম্য ইচ্ছাশক্তি
ওদের তাঁত বুনতে হয়। না হলে সংসার যে পথে বসবে। সরকার থেকে একটা ঘর এবং সাহায্য পেলে কিছুটা সুরাহা হয়।’
স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় মণ্ডলের আশ্বাস, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।আপনাদের কাছেই জানতে পারলাম। আমরা অবশ্যই ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াব।’ গঙ্গারামপুরের বিডিও অর্পিতা ঘোষাল বলেন, ‘কেন ওই পরিবারটি সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আশ্বাস আশ্বাসেই আটকে থাকবে নাকি বাস্তবেও কিছু ঘটবে সেই অপেক্ষায় রয়েছে সরকার পরিবার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here