শতবর্ষ তালপাতার বর্ণিত পুঁথি দেখে এখনো পূজিত হয় মা দুর্গা কোচবিহার শহরের ধর্মতলা এলাকার ভট্টাচার্যী বাড়িতে।

0
435

কোচবিহার :- শতবর্ষ তালপাতার বর্ণিত পুঁথি দেখে এখনো পূজিত হয় মা দুর্গা কোচবিহার শহরের ধর্মতলা এলাকার ভট্টাচার্যী বাড়িতে। কোচবিহার শহরের ধর্মতলা ভট্টাচার্যী পরিবার। পূর্ব পুরুষের বাংলাদেশ থেকে শুরু করা এই পুজো বর্তমানে কোচবিহার ধর্মতলা রমেন্দ্র ভবন এখন প্রাচীন নিয়ম নীতি মেনে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবার তাদের ৩৫৭বছরের পুরাণ পূজা । ভট্টাচার্যী বাড়িতেই পুজা মহালায়া থেকে সমস্ত নিয়ম-নীতি মেনে শুরু হয়। প্রতিবছর এই পরিবারের পুজোতে বহু মানুষ ভিড় জমান । যদিও এখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত বছরের মতো এবারও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পূজা সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত ভট্টাচার্যী পরিবার নিয়েছে । তবে নিয়ম-নীতি তে কোন খামতি থাকছে না । মহানবমীতে সাদা পাঠা বলি এক সময় জোড়া পাঁঠা বলি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল । তারপরই সকলেই মিলে ভোগ গ্রহণ করা হতো । তবে গত বছর থেকে বলিপ্রথা গুটিয়ে দিয়েছেন তারা । সেখানে তারা কবুতর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । অন্য বছরের মতো এই বছর থাকছে না ভোগ বিলির ব্যবস্থা। কাজের ফলে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যরাই বাইরে থাকেন। তবে পূজার সময় সবাই বাড়ি ফিরে আসেন । পূজার কটা দিন একসাথে আনন্দ করার উৎসবে মেতে ওঠা ভট্টাচার্যী পরিবারের সদস্যদের কাজ । যদিও গত বছর থেকে করোনার কারণে বেশ কিছু দূরে থাকা সদস্যরা আসতে পারছেন না । তবে দূর থেকেই বাড়ির পুজোর জন্য প্রত্যেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান বাংলাদেশের গুলি পড়ে এই পূজা ভট্টাচার্যী পরিবার শুরু করেছিল । তবে দেশভাগের আগেই তারা দেবী মূর্তি সহ কোচবিহারে চলে এসেছিলেন । কোচবিহার শহরের ধর্মতলা এলাকায় রমেন্দ্র ভবন নামে ভট্টাচার্যী পরিবারের বাড়ি । সেখান থেকেই আসার পর তারা এই বাড়িতে পূজা শুরু করেন । পরিবার সূত্রের খবর এই জমিতে তাদের বাড়ি রয়েছে সেটি একটি মুসলিম জমিদার পরিবারের ছিল। তাদের কাছ থেকে এই জমিটি নেওয়া । কোচবিহার তৎকালীন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক প্রথম এই বাড়িতে পুজো করে ছিলেন । তবে প্রাচীন পুথি ও নিয়ম-নীতি মেনে আজও ভট্টাচার্যী বাড়িতে পূজা হয়ে আসছে । ইতিমধ্যে ঐ পরিবারের ২৩ প্রজন্ম এই পূজায় যোগ দিয়েছে। পরিবারের একজন সদস্য জানান, সমস্ত নিয়ম নীতি মেনে পুজা অনুষ্ঠিত হয়।মহালায়া প্রতিপদ থেকে পূজা শুরু হয়ে যায়। প্রতিদিনই ভোগ রান্না হয়। ষষ্ঠীর দিন ঠাকুর নিয়ে এসে বাড়ির বেল গাছের নিচে ফেল বরণ করা হয়। এরপর সপ্তমী থেকে শুরু হয় পুজো । নবমীর দিন সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধিপূজা বাড়ির প্রত্যেক সদস্য উপস্থিত থাকেন । এখানে 64 টি বাতি দিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে আর আশীর্বাদ গ্রহণ করেন প্রত্যেকটা সদস্য। এছাড়া তারা জানান যে সমস্ত নিয়ম নীতি মধ্যে বাইশ কান্দির রেওয়াজ তারা করে আসছেন তাদের ।কথিত রয়েছে আসুর বধ করার পর দেবীকে দেবতারা বিভিন্ন উপহার দিয়েছিলেন ।সেই প্রথা মেনে দেবীর আশীর্বাদ যাতে পরিবারের সদস্যদের উপর বজায় থাকে তার জন্য বিসর্জনের পর কলা গাছের তলায় উঠানে তার জন্য 22 টি জিনিস হয় । সেখানে মাথা ঠেকিয়ে সেই জিনিস গুলো দিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন সকলে। বাইশ কান্দিতে সোনা রুপা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অন্য সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস রাখা হয় । সেই আশীর্বাদ গ্রহণের পর এই পূজা সমাপ্তি ঘটে ।
পরিবারের মহিলা সদস্যরা জানান পূজাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে একটা আলাদা উৎসবের মেজাজ থাকে । যাতে অংশগ্রহণ করেন পাশাপাশি নেই বিভিন্ন রান্নার হাত লাগান । মাছের ভোগ আলাদা করে করা হয়। প্রত্যেকটি আলাদা ঘর করা হয় । ঠাকুর বিসর্জনের পরিবারের সদস্যরাই অংশগ্রহণ করেন ।
এই বছরও সমস্ত নিয়ম রীতি মেনে তালপাতায় বর্ণিত শতাব্দী প্রাচীন পুথির মন্ত্রোচ্চারণ মধ্য দিয়ে পুরোহিত শ্যামল চক্রবর্তী পূজা করবেন । তবে পরিবারের পরম্পরা মানে পরিবারের এক সদস্য দুলাল ভট্টাচার্য বসেন । মহালয়া দিন থেকেই দেবীর আরাধনা শুরু হয়। প্রতিপদ দেবীর ঘোটকে স্থাপন করা হয়। প্রতিদিন চণ্ডীপাঠের পাশাপাশি দেবীকে পঞ্চ ব্যঞ্জন অন্নভোগ দেওয়া হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here