রিহ্যাবে তরতাজা যুবকের মৃত্যু! হাসপাতালের দরজায় লাশ ফেলে চম্পট

0
269

রিহ্যাবে তরতাজা যুবকের মৃত্যু! হাসপাতালের দরজায় লাশ ফেলে চম্পট। খুনের গন্ধে উত্তাল পতিরাম

বালুরঘাট, ১৬ এপ্রিল ——- নেশা ছাড়াতে গিয়েছিলেন ‘ব্যাক টু লাইফ’-এ। ফিরলেন লাশ হয়ে। গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন, মুখে চাপা আতঙ্কের ছাপ। হাসপাতালের এমারজেন্সির সামনে ‘বেওয়ারিশ’ লাশ হিসেবে পড়ে ছিলেন অভিষেক ঘোষ (৩৭)। কোনও সঙ্গী নেই, চিকিৎসক বা আত্মীয়েরও দেখা নেই। পরে পুলিশের তৎপরতায় জানা যায়— এই যুবক দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামেরই বাসিন্দা। আর তাঁর এই রহস্যমৃত্যুর কেন্দ্রবিন্দুতে এখন পতিরামের চকহাই এলাকার বিতর্কিত রিহ্যাব সেন্টার ‘ব্যাক টু লাইফ’।

বুধবার দুপুরে যে ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিষেকের পরিবার ও স্থানীয় মানুষ। সরাসরি খুনের অভিযোগ রিহ্যাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, “নেশা থেকে মুক্তি দেওয়ার নামে অভিষেককে আটকে রেখে চলত অকথ্য অত্যাচার। শেষমেশ পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।”তাদের আরো দাবি, খুনের ঘটনা গোপন করতেই দেহটি দ্রুত এমারজেন্সিতে রেখে চম্পট দেয় রিহ্যাব কর্তারা।

মৃতের বন্ধু গৌতম মালী জানান, “অভিষেক কিছুদিন ধরেই মাদকের সঙ্গে লড়াই করছিল। ওকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রিহ্যাবের আড়ালে কী ভয়ঙ্কর অত্যাচার চলত, সেটা বুঝতে পারিনি।“সুস্থ করার নামে মারধর করে খুন করা হয়েছে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে ওই সেন্টারে। তারা চান প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
আত্মীয় শিবেশ সরকার জানান, “ওকে ভালো করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ফিরিয়ে পেলাম লাশ। এটা একটা হত্যাকাণ্ড। আমরা এর বিচার চাই।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে পতিরামের চকহায়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্যাক টু লাইফ’ নামে ওই রিহ্যাব সেন্টারটি। প্রায় ত্রিশ জন রোগীর জন্য রয়েছে মাত্র পাঁচ-ছয়জন কর্মী। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছিল চিকিৎসা। মালিক পিন্টু রায়ের ছেলে রাজ রায়ের বিরুদ্ধেই উঠেছে মারধরের সরাসরি অভিযোগ। যদিও রিহ্যাবের অন্যতম কর্ণধার প্রদীপ মন্ডল দাবি করেন, “রাজই সব দেখে। আমি কিছু জানি না। দেহ হাসপাতাল পর্যন্ত ও-ই নিয়ে গিয়েছিল।”

বালুরঘাট হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ জানিয়েছেন, হাসপাতালের তরফে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে।

ডিএসপি সদর বিক্রম প্রসাদ জানান, “এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত হবে।”

এই ঘটনাকে ঘিরে গোটা পতিরাম উত্তাল। প্রশ্ন উঠছে, রিহ্যাব সেন্টারের আড়ালে কি চলছিল অত্যাচারের চক্র? প্রশাসনের ভূমিকা এবার কাঠগড়ায়। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে স্থানীয়রা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here