জলপাইগুড়িঃ-
রবিসনস্ট্রীট কাণ্ডের ছায়া কি এবার জলপাইগুড়ি’তে ! এক বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার এবং মৃতের স্ত্রী এবং কন্যার আচার, আচরণে এমন সন্দেহ’ই ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা শহর জুড়ে।
জলপাইগুড়ি শহরের ২১নং ওয়ার্ডের কলেজপাড়া এলাকা। শুক্রবার দুপুরে ওই এলাকার কর্মকার বাড়ি থেকে এদিন দুর্গন্ধ পান সংলগ্ন বাড়িতে থাকা আত্মীয় এবং পাড়া-প্রতিবেশিরা। তারা কিছু একটা হয়েছে, আঁচ করে স্থানীয় কাউন্সিলর তারকনাথ দাসকে খবর দেন। কাউন্সিলার যোগাযোগ করেন কোতোয়ালি থানায়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে এবং বাড়ির দোতালার ঘর থেকে অজিত কর্মকার(৭৭) নামে এক বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করে। মৃত বৃদ্ধ অজিত কর্মকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং ওই বাড়ির মালিক। স্ত্রী অঞ্জলি কর্মকার এবং একমাত্র কন্যা অনিন্দিতা কর্মকার কে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পাড়া-প্রতিবেশি থেকে শুরু করে মৃতের আত্মীয়েরা ভিড় জমায়। পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী অঞ্জলী কর্মকার এবং কন্যা অনিন্দিতা কর্মকার বাড়ির বাইরে আসেন। তখন মৃতের এক বোন চটি দিয়ে তাদের মারধোর করে পুলিশের সামনেই। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং দেহ নিয়ে জলপাইগুড়ি হাসপাতাল মর্গে আসে। যদিও এদিন দেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডাঃ আশিষ সরকার জানিয়েছেন অন্তত দু-তিনদিনের পুরানো দেহ, তাতে পচন ধরেছে। এখানে ময়নাতদন্ত সম্ভব নয়। তাই দেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে ঘটনা ঘিরে ক্রমশই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। মৃতের স্ত্রী, কন্যার আচরণ এবং বক্তব্য অস্বাভাবিক। অন্যদিকে আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের বয়ানে মিলছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মৃত অজিত কর্মকার(৭৭) অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী ছিলেন। বিশাল দুইতলা বাড়িতে তিনি, স্ত্রী এবং কন্যা থাকতেন। প্রায় গত বছর পাচেক ধরে তারা প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না। বাড়ির দরজা জানালা, অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকত। মৃতের তরুণী কন্যা উচ্চশিক্ষিত, (এম. এ. এবং বিএড) কিন্তু কোনো চাকরি করতে না। বিয়েও করেননি। আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের অভিযোগ, ওই বাড়িতে প্রতিদিনই অশান্তির শব্দ পাওয়া যেত। বৃদ্ধের ওপর স্ত্রী ও কন্যা অত্যাচার চালাতেন বলে অভিযোগ। আত্মীয় এবং পড়শিদের মধ্যে কারো কারো বক্তব্য অত্যাচার করে বৃদ্ধকে মেরে ফেলা হয়ে থাকতে পারে।
অন্যদিকে, প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে বৃদ্ধের শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে ঘটনাটি আত্মহত্যার কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মৃতের স্ত্রীর দাবি বুধবার দোতালার সিড়ির একটি লোহার রডে ঝুলন্ত অবস্থায় স্বামীকে দেখতে পান। অথচ এদিন পুলিশ দোতালার একটি ঘর থেকে মশারি চাপা দেওয়ার অবস্থায় দেহটি উদ্ধার করে।
মৃতার স্ত্রী এবং কন্যার কথা অনুযায়ী বুধবার বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তারা সেই দেহ নামিয়ে আনেন এবং সেই দেহ তারা আগলে বসে ছিলেন। কেন তারা কাউকে খবর দেননি? এই প্রশ্নের উত্তরে তারা জানিয়েছেন, সকলকেই খবর দেওয়া হয়েছিল, নরেন্দ্রমোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানানো হয়েছিল,কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মৃতের কন্যা অনিন্দিতা কর্মকার সিএন এর প্রতিনিধিকে বলেন তনুশ্রী ভট্টাচার্যকে ডেকে নিয়ে আসুন,তাকে সব বলব।
মৃতের স্ত্রী এবং কন্যার আচরণ এবং কথাবার্তে বিস্তর অসঙ্গতি লক্ষ করেছেন জলপাইগুড়ি হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস সরকারও।
তিনিই এদিন দেহের ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। যদিও পচন ধরে যাওয়ায় ময়নাতদন্তের জন্য সেহ তিনি উত্তরভঙ্গ মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দেন।
মৃতের ভাগ্নে দেবদাস কর্মকার জানিয়েছেন, তারা কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের দাবি জানিয়ে। এদিন ঘটনার তদন্ত করতে বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার। যদিও ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে চাননি।