মোবাইল সিম-সিন্ডিকেটের পর্দাফাঁস!

0
260

মোবাইল সিম-সিন্ডিকেটের পর্দাফাঁস! বৃহন্নলা-সহ ধৃত তিন, তথ্য পাচার করে কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ার অভিযোগ

বালুরঘাট, ৩০ এপ্রিল —– একটা সিমকার্ড। দেখতে ছোট, অথচ তার ভেতরে গাঁথা থাকতে পারে দেশের নিরাপত্তা, হাজার মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য, এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের কুশলী ছায়া। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ও গঙ্গারামপুরে গড়ে উঠেছিল ঠিক এমনই এক ভয়ানক তথ্য-সিন্ডিকেট। যাদের হাতে তথ্য হয়ে উঠেছিল টাকার খনি। সেই চক্রের মূলে থাকা বৃহন্নলা-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করল জেলা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া সামগ্রী দেখে রীতিমতো শিউরে উঠেছেন তদন্তকারীরা।

ডিএসপি সদর বিক্রম প্রসাদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে রাকিবুল ইসলাম (২৪), মোক্তার ইসলাম (২৬) ও বৃহন্নলা রত্না রায় (২৮)-কে। সিমকার্ড থেকে প্যান, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আধার— কী নেই তাদের তথ্যভান্ডারে! উদ্ধার হয়েছে প্রায় একশোটি সিমকার্ড, ২২টি মোবাইল ফোন, ১৯টি এটিএম কার্ড, ৮টি জাল প্যানকার্ড, একটি ল্যাপটপ এবং ছয়টি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পাসবই।

তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান— এই চক্র দীর্ঘদিন ধরেই তথ্য পাচারের কাজ করছিল। মূলত রাকিবুল ও মোক্তার, যারা এক সময় এলাকার নামী ফুটবল খেলোয়াড় ছিল, তারা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে এই ‘সাইবার কারচুপি’র পাঠ নেয়। ফিরে এসে পতিরামে গড়ে তোলে এক ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট। আর সেই চক্রের অন্যতম মুখ রত্না রায়, এক বৃহন্নলা, যিনি সাধারণ মানুষকে লোভ দেখিয়ে জোগাড় করতেন আধার, প্যান, ব্যাঙ্ক তথ্য। এরপর সেই সব নথি দিয়ে বানানো হত বেনামি সিমকার্ড, যেগুলির মাধ্যমে চালানো হত ব্যাঙ্কিং প্রতারণা, ডিজিটাল চুরিচামারি, এমনকি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অপরাধকেও।জেলা পুলিশের কাছে যে তথ্য পৌঁছাতেই মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে কুমারগঞ্জের চকবরম থেকে মোক্তার আলমকে গ্রেফতার করা হয়। রাকিবুল ইসলাম ও রত্না কে গ্রেফতার করা হয়েছে গঙ্গারামপুর থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, ওইদিন রাতে মোক্তার পুলিশের চোখে ধুলো দিতে ঘরের মধ্যে একটি গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিল। যদিও সেখান থেকেই তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। একইভাবে গঙ্গারামপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার ভাই রাকিবুল ও তাদের অপর সঙ্গী রত্না।

পুলিশ জানায়, এই সমস্ত সিমকার্ড ইতিমধ্যেই বহু প্রতারণা মামলায় ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু নম্বরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে মেসেজ, ওটিপি জালিয়াতি, ফেক KYC— এমন বহু অপরাধমূলক কার্যকলাপের তথ্য মিলেছে। প্রমাণ মিলছে আন্তর্জাতিক হ্যাকিং রুটেরও।

ডিএসপি বিক্রম প্রসাদ বলেন, “টাকার বিনিময়ে তথ্য পাচারের কাজ করত এরা। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত বহু তথ্য এদের মাধ্যমে পাচার হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান। তদন্তে বহু নতুন নাম উঠে আসতে পারে।”

ধৃতদের বুধবার বালুরঘাট জেলা আদালতে পাঠিয়ে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। সাইবার বিশেষজ্ঞদের দল ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে। উদ্ধার হওয়া ডেটা বিশ্লেষণে তল্লাশি চালানো হচ্ছে আরও কয়েকটি রাজ্যে।

তথ্য এখন সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ— আর সেই সম্পদেই হাত মেলাতে গিয়ে গোটা একটি চক্র গড়ে তুলেছিল ‘সিম-সাম্রাজ্য’। প্রশ্ন উঠছে— এ তো শুধু শুরু, শেষ কোথায়?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here