রায়গঞ্জে:-মধ্যযুগীয় বর্বরতার অমানবিকতার ছবি ফুটে উঠল রায়গঞ্জে। মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের পায়ে শেকল বেঁধে বন্দী করে রাখার ঘটনার সাক্ষী রইল রায়গঞ্জের সীসগ্রাম।
দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পায়ে লোহার শেকল বেঁধে রাখা হয়েছে মধ্যযুগীয় ক্রীতদাসদের মতো। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার জন্য জমিজমা সহ সবকিছু বিক্রি করে সাময়িক চিকিৎসা করিয়েছিলেন অসহায় হতদরিদ্র বাবা মা। কিন্তু অর্থাভাবে এখন বন্ধ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যাবস্থা। অসহায় বাবা মায়ের এখন নিরুপায়। চোখের সামনে ছেলের এই কষ্ট দেখে নীরবে চোখের জল ফেলেন বাবা-মা। অমানবিক এই ঘটনার চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রায়গঞ্জের বড়ুয়া গ্রামপঞ্চায়েতের সীসগ্রামের সাধারন মানুষের মধ্যে।
বরুয়া গ্রামপঞ্চায়েতের সীসগ্রামে ভাঙাচোরা বারান্দায় মধ্যেই বসে থাকে বাপি রায় নামে এক যুবক। পায়ে পড়ানো লোহার শেকল। চলাফেরা করার সময় ভীষন কষ্ট হয়। শেকল বাঁধা দুটি পায়ে কালশিটে পরে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু জীবনের প্রথম দিকটা এমন ছিল না। বাপি একটা সময় বন্ধুদের সাথে স্কুলে যেত। গ্রামের মাঠে খেলাধুলো করত মনের আনন্দে। কিন্তু বছর দশেক আগে পালটে যায় তার ছন্দবদ্ধ জীবন। মানসিক রোগ ধরা পরে। জমানো সঞ্চয়ের মাধ্যমে শিলিগুড়িতে গিয়ে ছেলের চিকিৎসা করান পেশায় দিনমজুর খোকন রায়। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে চিকিৎসা। দিনকে দিন বাড়তে থাকে মানসিক রোগ। বাধ্য হয়েই ছেলের পায়ে লোহার শেকল আটকে দেন পরিবারের সদস্যরা। খোকন বাবু বলেন,” গতকয়েক মাস ধরে পাড়াপ্রতিবেশীদের বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর করতো বাপী। বাধ্য হয়েই শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। জমিজমা বেঁচে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। এখন হাতে পয়সা নেই। সরকার এগিয়ে এলে ছেলেটাকে সুস্থ্য জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবো। ” একই বক্তব্য জানিয়েছে পাড়াপ্রতিবেশিরা। অন্যদিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা লক্ষী বর্মন বলেন,” ঘটনা শুনেছি। বাপী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় লোকজনের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, করতো। বাধ্য হয়েই পরিবারের সদস্যরা তাকে আটকে রেখেছে। তবে ওর চিকিৎসার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। ” ঠিক এভাবেই দিনের পর দিন পায়ে ভারী শেকল কে নিয়েই দিনকাটাচ্ছে এই অসহায় যুবক। মাঝে মাঝে হয়তো রাগে,দুঃখে, অভিমানে শেকল ভাঙার গান গাইতে চায় বাপী। কিন্তু আর্থিক অনটন, উপেক্ষায় গলা বুজে আসে। শুধু নির্বাক,বোবা চাহনী খুঁজে ফেরে মুক্তির অনাস্বাদিত আনন্দকে।